তানবিরুল হক আবিদ >>
হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এটি এমন এক ইবাদত যা সামর্থ্যবান মুসলিমদের ওপর জীবনে একবার ফরজ হয়। হজ আদায় করার সৌভাগ্য সবার হয় না। যারা এই মহান ইবাদতের তৌফিক লাভ করেন, তাদের জন্য হজ শেষে কিছু করণীয় রয়েছে, শরিয়তের আলোকে যেগুলি পালন করা গুরুত্বপূর্ণ।
হজের মাধ্যমে মানুষের জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। হজ-পরবর্তী জীবনে যেন হজে অর্জিত শিক্ষা প্রতিফলিত হয়, এটা প্রত্যেক হাজির জন্য একান্ত কাম্য।
হজ থেকে ফিরে হাজিদের কয়েকটি করণীয় রয়েছে। যেমন:
(ক) হজ থেকে ফিরে মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত। হজরত কাব বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. সফর থেকে ফিরে মসজিদে (নফল) নামাজ আদায় করতেন। (বুখারি)
(খ) শুকরিয়াস্বরূপ গরিব-মিসকিন ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য পানাহারের ব্যবস্থা করা যায়। ফিকহের পরিভাষায় এই খাবারকে ‘নকিয়াহ’ বলা হয়। হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল সা. মদিনায় আগমনের পর একটি গরু জবাইয়ের নির্দেশ দেন। সাহাবিরা তা থেকে আহার করেছেন।’ (বুখারি)
(গ) ঘরে ফিরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, ‘তুমি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। সে নামাজ তোমাকে ঘরের বাইরের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবে। আর ঘরে ফিরে এলে তখনো দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। সে নামাজ তোমাকে ঘরের অভ্যন্তরীণ বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করবে।’ (মুসনাদে বাজ্জার)
(ঘ) জমজমের পানি লোকজনকে পান করানো মুস্তাহাব। অসুস্থ রোগীদের গায়ে ব্যবহার করাও বৈধ। (মুয়াল্লিমুল হুজ্জাজ: ৩০৩) হজরত আয়েশা রা. জমজমের পানি সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন এবং বলতেন, ‘রাসুল (সা.) জমজমের পানি সঙ্গে নিয়ে যেতেন।’ (তিরমিজি)
(ঙ) আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে হাদিয়া দেওয়া সুন্নত। তবে হাজিদের হাদিয়া দেওয়া এবং তাদের কাছ থেকে হাদিয়া গ্রহণ করা এখন প্রথায় পরিণত হয়েছে। তাই তা বর্জন করা উচিত। (আপকে মাসায়েল: ৪/ ১৬১)
একজন হাজি কাবা প্রাঙ্গণ থেকে নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসেন। হজ মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার মতো ক্ষমতা রাখে। তাই হজ থেকে ফিরে কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং একজন হাজি হিসেবে জীবনকে আরও বেশি শরিয়তের অনুসরণে ও মানবিকভাবে গড়ে তোলাই আসল সফলতা। হজ যেন জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, সেই চেষ্টাই হওয়া উচিত হাজিদের প্রধান লক্ষ্য।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইফতা বিভাগ, যাত্রাবাড়ি বড় মাদরাসা, ঢাকা।
এআইএল/