হাসান আল মাহমুদ >>
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এক ধর্মপ্রাণ কম্পিউটার ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে দাড়ি ধরে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি মো. নাসিম ভূঁইয়া (৪৫)। হামলার ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে। দাড়ি ধরে নির্যাতনের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও সচেতন নাগরিকরা।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আলী আজম মানিক ওই এলাকায় ‘মানিক কম্পিউটার’ নামে একটি দোকান পরিচালনা করেন। তিনি ঘিওর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, অভিযুক্ত নাসিম প্রায়ই বিভিন্ন কাজ করিয়ে পারিশ্রমিক না দিয়ে চলে যেতেন। টাকা চাইলে হুমকি দিতেন দোকান বন্ধ করে দেওয়া বা ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার। সোমবার (২৩ জুন) রাত ৯টার দিকে ফের দোকানে এসে জরুরি কাজ করতে বলেন নাসিম। মানিক তাকে অপেক্ষা করতে বললে তিনি রেগে গিয়ে মানিকের দাড়ি ধরে টানেন, গালিগালাজ করেন এবং একপর্যায়ে কিল-ঘুষি ও থাপ্পড় মারতে শুরু করেন।
চিৎকারে আশপাশের লোকজন ও কাস্টমাররা এসে মানিককে উদ্ধার করেন। পরে তাকে আহত অবস্থায় ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হামলার সময় দোকানের একটি কম্পিউটার মনিটর ভাঙচুর করেন অভিযুক্ত, যার ক্ষতি প্রায় ১৫ হাজার টাকা।
অভিযুক্ত নাসিম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “মানিক মিয়া কাজের অতিরিক্ত টাকা দাবি করলে আমি প্রতিবাদ করি। তিনি গালিগালাজ করলে রেগে গিয়ে মারধর করি।”
ঘিওর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কোহিনুর মিয়া বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভে ফুঁসছে জনতা
ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দাড়ি টানার মতো ন্যাক্কারজনক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক শরীফ মুহাম্মদ বলেন, ‘ঘিওরের এই ঘটনাটি হৃদয় বিদারক। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষকে এভাবে অপমান ও আঘাত করার প্রতিবাদে আমি সোচ্চার। অভিযুক্ত সন্ত্রাসী নাসিম ভূঁইয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
বিশিষ্ট উপস্থাপক ও রাজনীতিবিদ শাহ ইফতেখার তারিক বলেন, ‘এই অপরাধী যেই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনতেই হবে। ধর্মীয় লেবাসে থাকা কাউকে এভাবে অপমানের চেষ্টা নতুন এক ধরনের ফ্যাসিবাদ—যা শিকড় গজানোর আগেই গুঁড়িয়ে দিতে হবে।’
প্রখ্যাত ইসলামি বক্তা মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ বলেন, ‘একজন সুন্নতি লেবাসধারী ভাইয়ের দাড়ি ধরে মারধরের ভিডিও দেখে ব্যথিত হয়েছি। অপরাধী যত বড় প্রভাবশালীই হোক, তাকে এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে অন্য কেউ এমন ন্যক্কারজনক কাজের সাহস না পায়।’
‘জুলাই যোদ্ধা’ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘যত পরিচয়ই থাকুক না কেন, এই নরপশুর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
ইসলামের আলোকে এই অপরাধ ভয়াবহ: জাতীয় মুফতী বোর্ড ফাউন্ডেশন
এ বিষয়ে জাতীয় মুফতী বোর্ড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুফতি খোরশেদ আলম কাসেমী ৩৬ নিউজকে বলেন, ‘একজন মুসলমানের মুখমণ্ডলের দাড়ি হাদীস অনুযায়ী সুন্নতের অংশ। কারও দাড়ি ধরে টানাটানি করা কেবল একজন ব্যক্তিকে নয়, ইসলামের একটি নিদর্শনকে অবমাননা করার নামান্তর।’
তিনি বলেন, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে এটি গর্হিত অপরাধ। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং সরকার ও প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি—দাড়ি ধরে নির্যাতনের এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক।’
হাআমা/