হাসান আল মাহমুদ >>
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে গত বছরের জুলাইয়ে রাজপথে নেমেছিল দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী। সেই ‘জুলাই আন্দোলন’-এর এক বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
আন্দোলনের সূচনা
২০২৪ সালের ২ জুলাই বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল শাহবাগে গিয়ে অবস্থান নেয়। প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ শেষে শিক্ষার্থীরা সরে গেলেও আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা চাই’, ‘আঠারোর পরিপত্র পুনর্বহাল করো’, ‘ছাত্রসমাজ গড়বে দেশ, মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ’—এমন নানা স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করেন। আন্দোলনের সমন্বয়করা বলেন, এটি শুধু চাকরি প্রার্থীদের দাবি নয়, এটি একটি বৈষম্যবিরোধী রাষ্ট্র গঠনের লড়াই।
দাবির পটভূমি
২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিল। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০, জেলা ১০, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ এবং প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ কোটা নির্ধারিত ছিল। তবে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের মুখে ওই বছর সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগে নীতিমালা জারি করে।
২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাতিল অংশটি চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন কয়েকজন। সেই রিটের রায়ে ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ২০১৮ সালের পরিপত্রের একটি অংশ অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর থেকেই নতুন করে আন্দোলনে নামে ছাত্রসমাজ।
আন্দোলনের বিস্তার ও শহিদ আবু সাঈদ
আন্দোলনের অন্যতম নাটকীয় মুহূর্ত ছিল ২৪ জুলাই। ওই দিন রংপুরে ছাত্রনেতা আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনার পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে এবং ২৪ জুলাই ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা আসে বিভিন্ন ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে।
এক বছর পর পরিস্থিতি
আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত তাদের মূল দাবি—২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল এবং মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা—বাস্তবায়ন হয়নি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কোটা সংক্রান্ত বিষয়গুলো এখনো অস্পষ্ট।
নিয়োগ পরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতা, ফল প্রকাশে বিলম্ব এবং স্বচ্ছতার অভাব নিয়েও অভিযোগ রয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ছাত্রদের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও অবস্থান নিয়েছে। কেউ কেউ প্রকাশ্যে সমর্থন জানালেও অনেকেই এটি নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধায় ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের দমন-পীড়ন এবং গোপন নজরদারিও ছিল আন্দোলন দমনের অন্যতম উপায় হিসেবে ব্যবহৃত।
ছাত্রসমাজের প্রতিক্রিয়া
আন্দোলনকারীরা মনে করেন, তাদের দাবি পূরণ না হলেও এই আন্দোলন ছাত্রসমাজের মধ্যে অধিকার সচেতনতা গড়ে তুলেছে। রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে তারা রাজপথে একত্রিত হতে পেরেছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় শক্তি হতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা বলেন, “আবু সাঈদের রক্ত বৃথা যাবে না। আমরা শুধু চাকরি নয়, ন্যায্যতার পক্ষে লড়াই করেছি। এই লড়াই চলবে।”
হাআমা/