হাসান আল মাহমুদ >>
বাংলাদেশে বিভক্ত হয়ে থাকা দুই জমিয়তের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দেখা দিয়েছে এক অভিন্ন অবস্থান। জনপ্রতিনিধিত্বের রূপান্তরিত (পিআর) পদ্ধতির বিপক্ষে এবং বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলেছেন উভয় পক্ষের শীর্ষ নেতারা।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের (মুফতি ওয়াক্কাস অনুসারী অংশ) কেন্দ্রীয় সভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুর রহীম ইসলামাবাদী বলেছেন, “আমরা পিআর নয়, বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। কারণ জমিয়ত জনসম্পৃক্ত একটি দল।”
তিনি শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকাল ৩টায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরের আব্দুস সামাদ আজাদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত জমিয়তের উপজেলা, যুব ও ছাত্র শাখার কাউন্সিল ও কর্মিসভায় এসব কথা বলেন।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শায়খ আব্দুস শহীদ জামালাবাদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন খান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ওয়ালি উল্লাহ আরমান ও মাওলানা জয়নাল আবেদীন, সহকারী মহাসচিব হাফিজ রশিদ আহমদ, শান্তিগঞ্জ উপজেলা সভাপতি মাওলানা হোসাইন আহমদ প্রমুখ।
এদিন জগন্নাথপুর উপজেলা, যুব ও ছাত্র জমিয়তের তিনটি পূর্ণাঙ্গ ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিও গঠন করা হয়।
একই সুরে আরেকটি বক্তব্য দিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব (মুফতি ওয়াক্কাস সমর্থিত) ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম।
পিআর বা আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশে কোনো পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হবে না। এই পদ্ধতির মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য নয়, বরং বিভাজন ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।”
শুক্রবার যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর উপজেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অন্যদিকে, আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমীর অনুসারী জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেছেন, ‘যেসব দল পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চায়, তারা যেন আগে ইশতেহারে এই ঘোষণা দেয়। জনগণ ম্যান্ডেট দিলে ক্ষমতায় গিয়ে তা বাস্তবায়ন করুন।’
তিনি বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির দাবি করা সংবিধানবিরোধী। কারণ সংবিধানে বলা আছে, প্রত্যক্ষ ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হবে।’
তিনি শনিবার (৫ জুলাই) মাগুরা জেলা জমিয়তের সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি মাওলানা কাজি জাবের বিন মুহসিন তাজাল্লা। প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা আনোয়ারুল করীম যশোরী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা জয়নুল আবেদীন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা লোকমান মাজহারী।
সম্মেলন শেষে ৬১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন জেলা কমিটি গঠন করা হয়।
ভাগ হয়ে গেলেও অবস্থান অভিন্ন
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ দলটি বিভক্ত হয়ে যায়। এক অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন মুফতি ওয়াক্কাস (রহ.)-এর অনুসারী আল্লামা আব্দুর রহীম ইসলামাবাদী এবং ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম। অন্য অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক ও মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
দুই শিবির আলাদা পথে চললেও, পিআর পদ্ধতি সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের বক্তব্যের অভিন্নতা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে।
হাআমা/