হাসান আল মাহমুদ >>
আজ হিজরি ১৪৪৫ সনের মহররম মাসের ১০ তারিখ—পবিত্র আশুরা। এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে শোক, ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির এক অনন্য মহিমায় উজ্জ্বল। ইসলামপূর্বকাল থেকেই মহররম মাসকে আরবরা সম্মান জানাত। ইসলাম এ মাসের তাৎপর্যকে আরও গভীর ও বিস্তৃত করেছে।
আশুরার ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
মহররম মাসের ১০ তারিখে ঘটে যাওয়া বহু ঐতিহাসিক ও নবীপ্রতীক ঘটনাবলির কারণে দিনটি ইসলামের ইতিহাসে স্মরণীয়:
- হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আগমনের পর এই দিনে পুনর্মিলিত হন।
- হযরত নূহ (আ.)-এর নৌকা প্লাবনের শেষে জুদি পাহাড়ে এসে স্থিত হয়।
- হযরত ইবরাহিম (আ.) আগুনে নিক্ষিপ্ত হলে আল্লাহর আদেশে সেই আগুন ঠান্ডা ও নিরাপদ হয়ে যায়।
- হযরত মুসা (আ.) ফেরাউনের কবল থেকে বনি ইসরাইলকে মুক্ত করেন।
- হযরত আইয়ুব (আ.) রোগমুক্ত হন, হযরত ইউসুফ (আ.) পুনরায় পিতামাতার সঙ্গে মিলিত হন।
- হযরত ইদরিস (আ.) এই দিনেই উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হন।
- মহানবী (সা.) বলেছেন, কিয়ামতও এই দিনেই সংঘটিত হবে।
কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা:
তবে আশুরার ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে ৬১ হিজরিতে কারবালার প্রান্তরে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) ও তাঁর সাথিরা ইয়াজিদের সেনাবাহিনীর হাতে শাহাদাতবরণ করেন। মাত্র ৭০ জনের মতো সঙ্গী নিয়ে হোসাইন (রা.) দাঁড়িয়েছিলেন জুলুমের বিরুদ্ধে। তাঁদের রক্তের অম্লান স্মৃতিতে আশুরা পরিণত হয়েছে আত্মত্যাগ ও ন্যায়ের প্রতীকে।
বাংলাদেশে আশুরা পালনের চিত্র:
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আজ রবিবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন মসজিদে চলছে বিশেষ ইবাদত, দোয়া মাহফিল। ব্যক্তিগত জীবনে অনেক মুসলমান পালন করছেন নফল রোজা। এদিকে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল।
সভায় উপস্থিত থাকবেন মুফতি মাওলানা মো. মুজির উদ্দিন, অধ্যক্ষ—মদিনাতুল উলুম মহিলা কামিল মাদরাসা। সভাপতিত্ব করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ।
রাষ্ট্রীয় বার্তা:
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আশুরা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও বাণী দিয়েছেন। তাঁরা আশুরার শিক্ষাকে আত্মস্থ করে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইবাদতের গুরুত্ব:
আশুরার রোজা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে— ‘আশুরার রোজা বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ করে।’
প্রথম যুগে এ রোজা ফরজ ছিল, পরে রমজান ফরজ হওয়ায় এটি নফল হয়ে যায়। রাসুল (সা.) আশুরার দিন ও পূর্বদিন (৯ মহররম) অথবা পরদিন (১১ মহররম) মিলিয়ে দুটি রোজা পালনের উপদেশ দিয়েছেন।
নিরাপত্তা ও নির্দেশনা:
আশুরার তাৎপর্যময় ইতিহাসকে কিছু মানুষ ভ্রান্তভাবে দিনটি উদযাপন করে। যা ইসলামের প্রকৃত ধারক নয়। তাজিয়া মিছিলসহ ইসলাম সমর্থিত নয় এমন বহু বিষয় এ দিনে বিহারি সম্প্রদায় পালন করে থাকে। তাজিয়া মিছিলকে ঘিরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। মিছিলে দা, ছুরি, বল্লম, তরবারি, লাঠি এবং আতশবাজি বা পটকা ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডিএমপি জানিয়েছে, এসব জিনিস ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। তাই ১৯৭৬ সালের ডিএমপি অর্ডিন্যান্সের ২৮ ও ২৯ ধারার ক্ষমতাবলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
উপসংহার:
আশুরা শুধু শোক বা স্মৃতির দিন নয়; এটি শিক্ষা ও আত্মসংযমের দিন। সত্য, ন্যায় ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের এক গৌরবময় অনুরণন। মুসলমানদের উচিত এই দিনের শিক্ষা অন্তরে ধারণ করে জীবন পরিচালনা করা।
হাআমা/