হাসান আল মাহমুদ >>
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সাহসী সম্পাদক এবং জাতীয় স্বার্থে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত জনাব ড. মাহমুদুর রহমানের শ্রদ্ধেয়া মাতা, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগম আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আজ রোববার (৬ জুলাই) ভোর সোয়া পাঁচটায় রাজধানীর মগবাজার ইনসাফ বারাকাহ কিডনি হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি একমাত্র পুত্র মাহমুদুর রহমান, পুত্রবধূ ফিরোজা মাহমুদ, ছোট বোন মনিরা মাহমুদসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী, আত্মীয়-স্বজন ও ছাত্র-ছাত্রী রেখে গেছেন।
অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের ইন্তেকালে দেশের ইসলামী রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। একের পর এক শোকবার্তা দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন ইসলামী সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের শোক
জমিয়তের সভাপতি শাইখুল হাদীস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক এবং মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী এক শোকবার্তায় বলেন, ‘একজন আদর্শ মায়ের ছায়ায় বেড়ে উঠেই ড. মাহমুদুর রহমান জাতির জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। তাঁর মায়ের ইন্তেকাল নিঃসন্দেহে একটি অপূরণীয় ক্ষতি।’
তাঁরা মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির শোক
দলটি এক শোকবার্তায় বলেন, ‘অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগম ছিলেন এক সাহসী, মমতাময়ী ও আদর্শবান নারী, যিনি সমাজে ছিলেন উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। তাঁর জীবন ছিল ধৈর্য, ত্যাগ ও নীতির অনন্য দৃষ্টান্ত।’
দলটি মরহুমার জান্নাতুল ফেরদাউস কামনা করে পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের শোক
দলটির আমির মাওলানা মামুনুল হক এবং মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন বলেন, তিনি ছিলেন একজন আদর্শ মা, ধার্মিক ও দৃঢ়চেতা নারীর প্রতিচ্ছবি। তাঁর সুশিক্ষা ও আদর্শিক অনুপ্রেরণাতেই মাহমুদুর রহমান আজ দেশ ও জাতির পক্ষে নির্ভীকভাবে কণ্ঠ তুলে ধরছেন।”
তাঁরা বলেন, এই শোক কেবল পারিবারিক নয়, জাতির জন্যও এক গভীর বেদনাবিধুর ক্ষতি।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের শোক
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান এক যুক্ত শোকবার্তায় বলেন, ‘মা একজন সন্তানের জীবনের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থল, পরম মমতার উৎস, এবং আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামত। তাঁর ইন্তিকাল শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত ক্ষতিই নয়, বরং একটি পরিবার, সমাজ ও জাতির জন্যও এক গভীর শোক ও বেদনাবিধুর ঘটনা। মরহুমা ছিলেন একজন আদর্শ অধ্যাপিকা। দীর্ঘ সময় সময় শিক্ষকতার জীবন অনেক ছাত্র ছত্রীকে গড়ে তুলেছেন।’
তিনি ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের ষড়যন্ত্রের কারণে মিথ্যা মামলা ও হয়রানীর শিকার হয়েছেন। তার ছেলে দেশান্তরিত হয়েছে। কিন্তু তিনি আপস করেনি। তিনি এক সাহসী বীর প্রসবিনী মা। তার তুলনা হয় না।
হেফাজত নেতারা বলেন, তিনি একজন পরহেজগার, ধর্মপরায়ণ ও আদর্শ মুসলিম নারী। মরহুমার সন্তান মাহমুদুর রহমান, তার জীবন ও কর্মকাণ্ডে তাঁর সুচিন্তিত ইসলামী আদর্শের প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই।”
নেতৃদ্বয় আরও বলেন, ‘আমরা পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করছি, তিনি যেন মরহুমাকে পূর্ণ মাগফিরাত দান করেন, তাঁর কবরকে প্রশান্তিময় করে দেন, কবরকে জান্নাতের এক টুকরো বাগিচায় পরিণত করেন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সুউচ্চ মাকাম দান করেন। আমীন।’
তারা বলেন, ‘আমরা শোকসন্তপ্ত মাহমুদুর রহমান সাহেবসহ তাঁর পরিবারবর্গ, আত্মীয়স্বজন ও প্রিয়জনদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তায়ালা যেন তাঁদেরকে এই শোক সইবার সামর্থ্য ও অটল ধৈর্য দান করেন এবং এই দুঃসময়ে তাঁর করুণা ও সহানুভূতির ছায়া দিয়ে রাখেন। দুনিয়ায় যত কষ্টই আসুক না কেন, ঈমানের আলোয় সান্ত্বনা লাভ হোক এই দোয়াই আমাদের।’
আজ বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে মরহুমার জানাযা অনুষ্ঠিত জানাযায় উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমীসহ অন্যান্য আলেমগণ।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শোক
মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘শুধু সত্যনিষ্ঠ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মা হওয়ার কারণে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার তাঁকেও টার্গেট করেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
তিনি মরহুমার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন এবং পরিবার-পরিজনকে সবর ও সান্ত্বনার শক্তি দান করুন। আমীন।’
হাআমা/