হাসান আল মাহমুদ >>
ঢাকার পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে এক ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে বিস্ময়ে-ভয়ে অনেকেই বাকরুদ্ধ। এই জঘন্য ঘটনায় হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে সর্বমহল থেকে।
গত ৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে মো. সোহাগ (৪৩) নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। স্থানীয়রা জানান, সোহাগ চাঁদা না দেওয়ায় যুবদল সংশ্লিষ্ট কিছু দুর্বৃত্তের রোষানলে পড়েন।
নিহত সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঐ এলাকায় ভাঙারির ব্যবসা করতেন। ঘটনার পর চকবাজার থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মঈন ও তার সহযোগী জনি-কে আটক করেছে পুলিশ।
ভাইরাল ভিডিওতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে নেটিজেনরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়— সোহাগকে উলঙ্গ করে রাস্তায় ফেলে পাথর দিয়ে মাথায় থেঁতলে মারা হচ্ছে, আর পাশেই চলছে বুনো উল্লাস। অনেকেই এই ঘটনার সঙ্গে আইয়ামে জাহেলিয়ার বর্বরতার তুলনা করেছেন।
খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বলেন, ‘প্রকাশ্যে এই নৃশংসতা মনুষ্যত্বকেও হার মানিয়েছে। শুধু বিচারের দাবিই যথেষ্ট নয়, এই হায়ওয়ানদের শেকড় উপড়ে ফেলা এখন সময়ের দাবি।’
ইসলামী আলোচক মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ বলেন, ‘আওয়ামিয়্যতকেও হার মানালো নব্য ফ্যাসিবাদ। চাঁদা না দিলে উলঙ্গ করে মানুষ খুন—এটাই যদি নতুন বাংলাদেশ হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাচ্ছি?’
দাওয়াতি সংগঠন পয়ামে ইনসানিয়াত বাংলাদেশের আমির ড. মাওলানা শহীদুল ইসলাম ফারুকী বলেন, ‘রাজধানীর মিটফোর্ডে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এক ব্যবসায়ীকে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়েছে। ভিডিও দেখে স্থির থাকা যাচ্ছে না। অন্ধকার যুগের নৃশংসতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ফ্যাসিস্ট আমলে বিশ্বজিৎ ও আবরার ফাহাদদের এ ধরনের বর্বর ও বিভৎস হত্যাকান্ড আমরা দেখেছি। দেখেছি মানবতা ভূলুন্ঠিত হতে। কিন্তু হাজার হাজার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই বিপ্লবের নতুন বাংলাদেশে এ ধরনের বর্বর ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ ধরনের ঘটনা জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ম্লান করে দিবে। অবিলম্বে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
ইসলামিক জনকল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মুফতি আব্দুল হান্নান ফয়েজী বলেন, ‘এই বর্বরতা ইসলামের, মানবতার ও ন্যায়বিচারের চরম অপমান। এরা যেন আর কখনও এমন করার সাহস না পায়, এমন উদাহরণ তৈরি করতে হবে।’
জুলাই যোদ্ধা এনসিপি নেতা সারজিস আলম বলেন, ‘চাঁদাবাজদের পৃষ্ঠপোষকদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। বিএনপি নেতা তারেক রহমানের উচিত—এই বর্বর ঘটনায় নিজের দলের দায় স্বীকার করে ব্যবস্থা নেওয়া। ২০০৬ এর লগি-বৈঠা আর বর্তমানের পাথর-খুন একই সূত্রে গাঁথা।”
ইসলামী আলোচক মাওলানা আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘জীবন কেড়ে নিয়ে, সেই নিথর শরীরের উপর নৃত্য—এদের খুঁটির জোর কী? জনগণ জানুক, কীভাবে ক্ষমতার লোভে তারা মানুষ হয়ে উঠেছে পশু!’
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শরফুদ্দীন ইউসুফ ফাহিম বলেন, ‘পুরান ঢাকার যে হত্যাকান্ডের ছবি ভাসছে নেট দুনিয়া তার বিচার ও একই কায়দায় না হলে মানবতা হারিয়ে যাবে! তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা আর জালিমদের বিচার দাবীই দুর্বল মুসলমান হিসাবে মহান আল্লাহ পাকের দরবারে প্রার্থনা করছি, আমিন।’
কলরিব শিল্পী আবু রায়হান বলেন, ‘পুরান ঢাকার এই দৃশ্য জাহেলি যুগের নৃশংসতাকেও হার মানায়। রাজনীতি যখন বর্বরতার হাতিয়ার হয়, তখনই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ হতে বলা হয়েছে, ‘মিডফোর্ডের ঘটনা ঘটেছে গত পরশু। অর্থাৎ ঘটনা ঘটে যাওয়ার ৪৮ ঘন্টা পর একটা ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় এই সমালোচনা তৈরি হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিম সকল মিডিয়াই এই ঘটনা জানতো এবং তাদের কাছে এই ফুটেজ ছিলো। প্রশ্ন হলো, এই মিডিয়া হাসিনার কোল থেকে নেমে কাদের কোলে ওঠার কারণে ৪৮ ঘন্টা পার হওয়ার পরেও বাংলাদেশের কোনো মিডিয়া এই হত্যাকান্ডকে সামনে আনলো না?’
এদিকে এ ঘটনায় জাতীয় মুফতী বোর্ড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুফতী খোরশেদ আলম কাসেমী, বলেন, ‘ইসলামে জীবন হত্যা কঠিন অপরাধ। পাথর দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা শরিয়ত অনুযায়ী হদ শাস্তির আওতায় পড়ে। এই ঘটনা শুধু দুনিয়ায় নয়, আখিরাতে আল্লাহর কড়া বিচার ডেকে আনবে।’
হাআমা/