হাসান আল মাহমুদ >>
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে চাঁদা না দেওয়ায় ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে পাথর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে হত্যা করার ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আলেমগণ একে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা ও জাহিলি বর্বরতার চরম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড কেবল ব্যক্তিগত অপরাধ নয়; এটি বিচারহীনতা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার ফল।’ তাঁরা পুলিশ বাহিনীর কাঠামোগত সংস্কার এবং চাঁদাবাজির রাজনীতি নির্মূলের আহ্বান জানান।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিদেশে অবস্থানকালেই এই হত্যার খবর শুনে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এটা কোনো সভ্য সমাজ হতে পারে না।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, ‘এটি একটি ভয়াবহ বার্তা। চাঁদাবাজদের দ্বারা দেশের ব্যবসা, ইমাম-খতিব, এমনকি সাধারণ মানুষও নিরাপদ নয়। নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কার এনে দুর্বৃত্তদের রাজনীতি থেকে বাদ দিতে হবে।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, ‘চাঁদা না পেয়ে যুবদলের কর্মীরা যে বর্বর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা আওয়ামী ফ্যাসিবাদকেও হার মানিয়েছে। জনগণ এই নতুন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াবে।’
নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার বলেন, ‘চকবাজার যুবদলের এক নেতার নেতৃত্বে এমন ভয়াবহ কাণ্ড জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। বিএনপিকেও নিজেদের নেতাকর্মীদের লাগাম টেনে ধরতে হবে।’
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘জাহেলি যুগের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে এই ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল না হলে প্রশাসন নিরব থাকত। এখনই দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক ভার্চুয়াল সভায় বলেন, ‘আমরা বারবার অন্তর্বর্তী সরকারকে বলেছি, ব্যবস্থা নিন। কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তার উত্তর সরকারকেই দিতে হবে।’
এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। পাঁচজন ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে।’
এদিকে ইসলামি আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘এই কসাইদের বিরুদ্ধে কিসাসের বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্রুত বিচার কার্যক্রম চালালে অপরাধ কমে যাবে।’
এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপি, ইসলামী ঐক্যজোট গাজীপুর, জামায়াতে ইসলামী চাঁদপুর, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী যুব আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে দ্রুত বিচারের দাবি জানায়। তারা জানান, যদি বিচার না হয়, তাহলে দেশজুড়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
হাআমা/