ইরানের পরমাণু স্থাপনায় বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে এবার চরম কূটনৈতিক চাপে পড়েছে নেতানিয়াহু। হামলার পাল্টা জবাবে ইরান যে কৌশলগত, সামরিক ও কূটনৈতিক দক্ষতা প্রদর্শন করেছে, তা শুধু ইসরায়েল নয়—তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকেও ভাবিয়ে তুলেছে। আর তাই গাজা যুদ্ধবিরতির আলোচনার অজুহাতে ওয়াশিংটনে ছুটে গেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর ইরানের পক্ষ থেকে যেভাবে কৌশলগত পাল্টা প্রতিক্রিয়া এসেছে, তাতে নেতানিয়াহু প্রশাসনের ভিত কেঁপে উঠেছে। ইরান এবার শুধু সামরিকভাবে নয়—রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ময়দানে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে।
সাম্প্রতিক ব্রিকস সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্বাস আরাঘচি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “ইসরায়েলের আগ্রাসন যদি থামানো না হয়, তাহলে এর আগুন শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের চরম লঙ্ঘন।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের এই কূটনৈতিক শক্তিমত্তাই এখন ট্রাম্প প্রশাসনকে নতুন সমঝোতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ট্রাম্প বলেছেন, “নেতানিয়াহুর সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আমরা দ্রুত একটি সিদ্ধান্তে আসতে চাই।” কিন্তু আড়ালে যে মূল এজেন্ডা ইরানের উত্থান ও পাল্টা প্রতিরোধ, তা অনেকটাই স্পষ্ট।
এদিকে, নেতানিয়াহু নিজেও স্বীকার করেছেন যে, ইরানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অবস্থান নিতে হলে তাকে আন্তর্জাতিক সমর্থনের প্রয়োজন। আর তাই তিনি ছুটে গেছেন ওয়াশিংটনে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহু এখন এক কঠিন চাপে রয়েছেন—একদিকে দেশের ভেতরে কট্টরপন্থী জোটের যুদ্ধচাপ, অন্যদিকে বাইরের জগতে ইরানের বুদ্ধিদীপ্ত কূটনৈতিক মোকাবিলা। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ তার জন্য একটি রাজনৈতিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খোঁজার প্রচেষ্টা।
অন্যদিকে, ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—আত্মরক্ষার অধিকার তারা ছাড়বে না। বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরাইলের আগ্রাসন থামাতেই হবে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—যুক্তরাষ্ট্র কি আসলেই শান্তির পক্ষ নেবে, নাকি নেতানিয়াহুর হাত ধরেই নতুন করে সংঘাত ছড়াবে?
এনএ/