হাসান আল মাহমুদ >>
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে বর্বরোচিত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও পতিত আওয়ামীলীগের হামলার ঘটনায় জাতীয় রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একে সরাসরি ফ্যাসিবাদী চক্রান্ত ও গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হিসেবে দেখছে। হামলার নিন্দা জানিয়ে নেতৃবৃন্দ সরকারের ব্যর্থতা, প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা ও দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের গভীর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন। তাঁরা হামলাকারী দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
দুষ্কৃতিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করুন: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুষ্কৃতিকারীরা আবারও দেশে অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকের হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, প্রশাসনের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ সদস্যদের আহত করা—সবই সেই অপতৎপরতারই বহিঃপ্রকাশ।’
‘এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তারা ইন্টেরিম গভর্নমেন্টকে বেকায়দায় ফেলতে চায়। দুষ্কৃতিকারীদের কঠোর হস্তে দমন ছাড়া বিকল্প নেই।’
তিনি সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানান এবং আহত পুলিশ সদস্যদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
স্বৈরাচারের দালালদের শাস্তি নিশ্চিত করুন: পীর সাহেব চরমোনাই
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘গোপালগঞ্জ বাংলাদেশের সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধীনে থাকা একটি জেলা। সেখানে আজ যারা এনসিপির ওপরে হামলা চালিয়েছে, তারা খুন, গুম ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত শক্তির পক্ষের লোক।’
তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দের ওপরে হামলা কোনোভাবেই বরদাশতযোগ্য নয়। দ্রুত নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অবরুদ্ধ নেতৃবৃন্দকে মুক্ত করতে হবে।’
পীর সাহেব অভিযোগ করেন, ‘প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ হয়েছে, এ বিষয়ে তদন্ত চাই। পুলিস সুপারদের ভূমিকা সন্দেহজনক।’
তিনি বলেন, ‘হামলাকারীদের ‘এলাকাবাসী’ বলে প্রচার রাষ্ট্রীয় চক্রান্তের অংশ। প্রকৃতপক্ষে তারা আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য।’
নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের দুঃসাহস মোকাবেলা করতে হবে: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বঘোষিত পথসভায় হামলার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি সংগঠনের এই দুঃসাহস মোকাবেলা করতে হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘দেশে চলমান অস্থিরতা দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ। তারা এখনো নিষ্ঠুরভাবে দেশের মানুষকে হত্যা করছে- তোলেন এই অভিযোগও।
গণতন্ত্রবিরোধী অপচেষ্টা বন্ধ করুন: খেলাফত মজলিস মহাসচিব
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘গোপালগঞ্জে এনসিপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বর্বরোচিত হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ ও পুলিশের ওপর আক্রমণ অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গণতন্ত্রবিরোধী।’
তিনি বলেন, ‘এই হামলা রাষ্ট্রীয় ও নাগরিক নিরাপত্তার ওপর সরাসরি হুমকি। একটি ভারতপন্থী গোষ্ঠী পলাতক নেত্রীর ইন্ধনে দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে।’
তিনি হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সরকারের ব্যর্থতার প্রমাণ। প্রয়োজন নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী পদক্ষেপ।’
ফ্যাসিবাদ রুখতে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন: নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহার বলেন, ‘ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর আবারও দুষ্কৃতিকারীরা নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে ফায়দা লুটতে চায়। আজকের গোপালগঞ্জের ঘটনা সেই ষড়যন্ত্রের অংশ।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির সুযোগে আওয়ামী দোসররা মরণকামড় দিয়ে ইন্টেরিম গভর্নমেন্টকে বেকায়দায় ফেলতে চায়।’
তিনি দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ রুখতে একমাত্র পথ—ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ। নচেত, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।’
হাআমা/