মাদ্রাসাশিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা আড়াল করতে উপজাতি মেয়েকে গণধর্ষণের মিথ্যা নাটক!

by amirulislamluqman20@gmail.com

খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ এনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা এবং মানিকছড়িতে মাদরাসাছাত্র মো: সোহেলকে (১৪) সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহরণের পর হত্যার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন।

এতে অভিযোগ করা হয়েছে, মাদরাসাছাত্র হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করতেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ওই মেয়েকে গণধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ পরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে দিয়ে পার্বত্য এলাকাটিকে অশান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি বিশেষ মহল।

বিজ্ঞাপন
banner

শনিবার (১৯ জুলাই) সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন।

লিখিত বক্তব্যে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি ভাইবোনছড়ায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ঘিরে একটি চরম মিথ্যাচার ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে একটি প্রেমঘটিত ব্যক্তিগত ঘটনাকে ‘গণধর্ষণ’ হিসেবে চালিয়ে দিয়ে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসে উঠেপড়ে লেগেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনার প্রকৃত পটভূমি হলো মেয়েটি দীর্ঘদিন ধরে নিজ জাতির এক যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্কে ছিল। সম্পর্ক ভেঙে গেলে মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তার অভিভাবক ১২ জুলাই খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে বিষপানের রোগী হিসেবে ভর্তি করায় এবং চিকিৎসা নিয়ে ১৪ তারিখ ছাড়পত্র পায়, পরে ১৬ জুলাই খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে বিষপানের রোগী হিসেবে মেয়েটিকে আবারো ভর্তি হয় এবং ঠিক ওইদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকজন যুবকের ছবি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগের প্রচারণা চালায় একটি কুচক্রী মহল।

অথচ ১৭ জুলাই, খাগড়াছড়ি সদর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২৭ জুন রাতে তার চাচার ভাড়া বাড়িতে চাচাকে আটকে রেখে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়েছে।’

এ সময় তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘ধর্ষণের মতো একটি ভয়াবহ অভিযোগ ঘটনার ২০ দিন পরে কেন তোলা হলো? এতবড় ঘটনার পরপরই মেয়ের পরিবার, চাচা কিংবা কোনো সংগঠন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হলো না কেন? কেন মেয়েটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চার দিন পর, হঠাৎ করে এমন একটি ন্যাক্কারজনক মামলা দায়ের করা হলো? মূল অভিযুক্ত মেয়েটির প্রেমিক (স্বজাতির), তাকে কেন মামলার আসামি করা হলো না?’

এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই মামলার ভিত্তিতে ১৭ জুলাই অভিযুক্ত চারজন (বাঙালি) যুবককে তাদের নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই— এই মামলাটির নেপথ্যে রয়েছে একটি স্বশস্ত্র উপজাতীয় গোষ্ঠী, যারা বন্দুকের মুখে পারিবারিক সমস্যাকে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে ধর্ষণ মামলায় রূপান্তরিত করে পাহাড়ে উত্তেজনা ছড়াতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করা।’

মাদরাসাছাত্র অপহরণ-পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মানিকছড়ির ছদরখীলের মাদরাসাশিক্ষার্থী মো: সোহেলকে গত ৪ জুলাই অপহরণ করে একটি চাঁদাবাজ স্বশস্ত্র গ্রুপ। অপহরণের পর বিপুল পরিমাণ অর্থ চাঁদা দাবি করে না পাওয়ায় ১২ দিন পর ১৬ জুলাই তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বাটনাতলী ইউনিয়নের বুদুংপাড়া একটি ছড়াতে ফেলে রাখা হয়। এটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ডই নয়; এটি মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ।’

এসময় তিনি এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট অস্ত্রধারী সশস্ত্র সন্ত্রাসী চক্রকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শান্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানান।

সভাপতি আরো উল্লেখ করেন, ‘দুটি ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে, মাদরাসাছাত্র মো: সোহেলকে অপহরণ ও চাঁদা না পেয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করার লক্ষ্যে ভাইবোনছড়ায় একটি প্রেমঘটিত ঘটনাকে ধর্ষণ মামলায় রূপান্তরিত করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পাঁয়তারা চলছে। ধর্ষণের ঘটনাটিকে এমনভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল বাঙালি যেন ধর্ষক।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি ভাইবোনছড়ার ধর্ষণ অভিযোগের পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত, সোহেল হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকা স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী চক্রকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রে জড়িত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া, পাহাড়ের সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সর্বোচ্চ অভিযান পরিচালনাসহ সশস্ত্র গ্রুপ কর্তৃক অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ করার জন্যে প্রশাসনের যথাযথ উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান।

এসময় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক মো: আসাদ উল্লাহ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: আ: কাইয়ুম, যুগ্ম সম্পাদক মো: জহির আহম্মদ, অশোক মজুমদার প্রমুখসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে তার বাবা ১৬ জুলাই খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ওইদিন রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করেন।

এদিকে, গত ৪ জুলাই রাতে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ২ নম্বর বাটনাতলী ইউনিয়নের ছদুরখীল এলাকায় নিজ বাড়িতে ফেরার পথে মাদরাসাছাত্র মো: সোহেল নিখোঁজ হয়। পরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা সোহেলের নানার নাম্বারে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটনার পর গত ১১ জুলাই মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে অপহরণ ও সহায়তা করার অপরাধে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে সোহেলের নানা আবদুর রহিম প্রকাশ গফুর আনসার অপহরণ মামলা দায়ের করলে প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে আটক করে যৌথবাহিনী। অপহরণের ১২ দিন পর ১৬ জুলাই বিকেলে উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের ছদুরখীল ওয়ার্ডের দুর্গম বুদংপাড়া এলাকার একটি ছড়া থেকে তার হাত, পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

এআইএল/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222