ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্তে উত্তপ্ত হচ্ছে দেশ

by hsnalmahmud@gmail.com

হাসান আল মাহমুদ >>

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন (OHCHR) আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের ঘোষণাকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অঙ্গনে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল, আলেম সমাজ, মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজীবী এবং নাগরিক সমাজের একাংশ এই উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তারা একে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ, ধর্মীয় মূল্যবোধে হুমকি এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করছেন।

বিজ্ঞাপন
banner

OHCHR কার্যালয়: কী, কেন ও কোথায়

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (OHCHR) বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ, প্রতিবেদন, সহায়তা এবং পরামর্শদানের কাজ করে থাকে। এর সদরদপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এবং বর্তমানে এটি ফিলিস্তিন, ইউক্রেন, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ ১৬টি দেশে আঞ্চলিক অফিস পরিচালনা করছে।

সূত্র মতে, ঢাকা অফিস মূলত দক্ষিণ এশিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সহায়তার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।

আলেম সমাজ ও ইসলামপন্থীদের আপত্তি

ঢাকায় এই কার্যালয় স্থাপনের ঘোষণার পরপরই বাংলাদেশের প্রধান ইসলামি দল ও আলেমসমাজ এর বিরুদ্ধে সরব হন। হেফাজতে ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, ইসলামিক বুদ্ধিজীবী ফ্রন্ট, ফেদায়ে মিল্লাত ফাউন্ডেশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন একে “পশ্চিমা এজেন্ডার অংশ” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

হেফাজতের আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই অফিস গুম-খুন বা মানবাধিকার নয়, বরং ধর্মীয় গোষ্ঠীকে উগ্রবাদী দেখিয়ে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে হেয় করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে।’

জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক বলেন, ‘যার নেতৃত্বে এই অফিস স্থাপন হবে, তিনি সমকামী—এমন তথ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাহলে এই অফিস কার জন্য? জনগণের না কি কোন গোপন এজেন্ডার জন্য?’

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উপদেষ্টা মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে যাতে আর কোন আন্দোলন না হয় সে ব্যাপারে সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দসহ এজেন্সিগুলো জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বাস্তবিকই আমাদের গর্বের ধন স্বর্ণপদক প্রাপ্ত এমন মহান ব্যক্তিত্ব একটা বিষয়ে ব্যখ্যা দাঁড় করালে জাতি খাবে। এমন ধারণা তাঁর নিজের মধ্যেও থাকতে পারে এবং অন্য কিছু বড় ব্যক্তিদের পক্ষ থেকেও পরামর্শ আসতে পারে। এরই মধ্যে কোন বৃহৎ দলও জোরালো কিছু করতে দেখা যাচ্ছেনা। তবে আমার মত কিছু অবুঝ মানুষ আছে, যাঁরা বিশ্বাস করে যে, এটা একটা সুদূর প্রসারী এজেন্ডা। তার মধ্যে দেশের স্বাধীন তা, সার্বভৌমত্ব ও ধর্মীয় স্বকীয়তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র নিহিত আছে। তাঁরা ইতোমধ্যেই নিজেদের কার্যক্রমের ইন্ডোমিনিটি দাবী করেছেন। তাঁরা পৃথিবীর কোথায় কি করেছেন সচেতন মহল ভালভাবেই জানেন।

আজ রোববার (২০ জুলাই) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

ইসলামি নেতৃবৃন্দের প্রধান আশঙ্কার জায়গা হলো—এই অফিসের মাধ্যমে বাংলাদেশে সমকামিতার মতো ধর্মবিরোধী সংস্কৃতি বৈধতা পাবে। তারা আশঙ্কা করছেন, OHCHR:

  • সমকামিতার বিরুদ্ধে থাকা দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বাতিলের সুপারিশ করবে।
  • LGBTQ+ সংগঠনগুলোকে সহায়তা ও বৈধতা দিতে চাপ সৃষ্টি করবে।
  • ধর্মীয় সমালোচকদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্ট তৈরি করবে।

ইসলামিক বুদ্ধিজীবী ফ্রন্টের সভাপতি বলেন, ‘এই অফিস দিয়ে সমকামিতা ও ধর্মদ্রোহকে মানবাধিকার বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

প্রতিবাদ কর্মসূচি: দেশব্যাপী প্রতিক্রিয়া

ইতিমধ্যে জমিয়ত ও হেফাজতের পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছে —২৫ জুলাই শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব জেলা শহরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে।

জমিয়তের মহাসচিব আফেন্দী বলেন,  ‘এটি জাতির বিরুদ্ধে চক্রান্ত। প্রতিবাদে রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।’

 বুদ্ধিজীবী ও বিশ্লেষকদের মতামত

প্রবাসী রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য এক পোস্টে বলেন, ‘যেসব দেশে এই অফিস আছে, সেখানেই মানবাধিকার সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘিত হয়। এটা স্পষ্ট প্রমাণ—এই অফিস মানবাধিকার রক্ষার জন্য নয়, বরং একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক নীতির বাস্তবায়ন কেন্দ্র।’

তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ধর্ম উপদেষ্টা ও আলেমদের মতামত উপেক্ষা করে এ সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো?

সরকারি কোনো উচ্চ পর্যায়ের প্রতিক্রিয়া এখনো না আসলেও প্রশাসন ধর্মীয় অঙ্গনের ক্ষোভ ও সম্ভাব্য রাজপথ উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে।

হাআমা/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222