মোদির শাসনামলে নারী ধর্ষণ বেড়েছে, বেশি অভিযোগ বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে

by amirulislamluqman20@gmail.com

আমিরুল ইসলাম লুকমান >>

ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতাদের বিরুদ্ধেই ধর্ষণ ও নারীর প্রতি অপরাধের সংখ্যাধিক অভিযোগ উঠছে, যা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নারী নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

বিজ্ঞাপন
banner

বুধবার (২৩ জুলাই) এক্সপ্রেস নিউজ সূত্রে এনডিটিভি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গেছে, বিজেপির বিধায়ক প্রভু চৌহানের ছেলে প্রতীক চৌহানের বিরুদ্ধে কর্ণাটকে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। মহারাষ্ট্রের ২৫ বছর বয়সী এক নারী অভিযোগ করেছেন, ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ পর্যন্ত প্রতীক তাকে একাধিকবার ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করেছেন।

ওই নারীর দাবি, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতীক তার সাথে প্রতারণা করেছেন, মানসিক-শারীরীক নিপীড়ন চালিয়েছেন, এমনকি আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছেন এবং তার শরীরে ব্লেড দিয়ে আঘাতও করেছেন।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

অপরদিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে ভারতের ১৫১ জন বর্তমান এমপি ও বিধায়কের বিরুদ্ধে নারীদের প্রতি সহিংসতা ও যৌন অপরাধ সংশ্লিষ্ট মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

এসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR) এর দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, এই ১৫১ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৪ জনই বিজেপির সদস্য, যাদের মধ্যে ১৬ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

এই চিত্র ভারতের রাজনীতিতে নারীর নিরাপত্তা, বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ক্ষমতাবানদের জবাবদিহি নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপ না নিলে নারীর প্রতি সহিংসতা কখনোই বন্ধ হবে না।

ভারতে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান এসব ঘটনা সাময়িক কোনো অপরাধ নয়— বরং দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একাধিক নেতা ও জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠে আসছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজেপির ‘বেটি পড়াও, বেটি বাঁচাও’ স্লোগান বাস্তবে রাজনৈতিক প্রচারণার একটি হাতিয়ার মাত্র, বাস্তবতা একেবারেই বিপরীত।

ভারতের এনডিটিভি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, বিজেপির অনেক সাবেক মন্ত্রী ও বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বিজেপির সাবেক বিধায়ক কুলদীপ সিং সেনগারকে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত তাকে আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল।

অন্যদিকে, বিজেপির সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিং-এর বিরুদ্ধে একাধিক নারী যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন, যার মধ্যে বেশ কয়েকজন কুস্তিগীরও রয়েছেন। যদিও এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে এখনও পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

সমাজ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিজেপির নারী-স্বার্থ সংক্রান্ত প্রচারণা আসলে লোক দেখানো, কারণ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে দল ও সরকার বারবার তাদের আড়াল করার চেষ্টা করে।

একাধিক মানবাধিকার কর্মীর মতে, ‘মোদি সরকারের এই নীতি—যেখানে অভিযুক্ত যদি দলের অভ্যন্তরে হয়, তবে তাকে রক্ষা করা হয়—এর ফলে দেশে যৌন অপরাধের মাত্রা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।’

দেশের নারী অধিকার আন্দোলনকর্মীরা বলছেন, যতক্ষণ না রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে কঠোর ও নিরপেক্ষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, ততদিন নারীর নিরাপত্তা শুধুই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে রয়ে যাবে। বাস্তবতার মুখ দেখবে না।

সূত্র: এক্সপ্রেস নিউজ।

এআইএল/

 

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222