বর্তমান স্ট্রাকচার প্ল্যান এবং তিনধাপ ভিত্তিক মহাপরিকল্পনার সর্বশেষ তৃতীয় ধাপের গেজেট করা ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করাসহ ৪ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট।
রোববার (২৭ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব দাবি তুলে ধরেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি স্থপতি আবু সাইদ এম আহমেদ।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের অন্য ৩টি দাবি হচ্ছে- রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আইনের সঠিক ও যৌক্তিক বাস্তবায়নের জন্য ডিজিটাল এবং সহজলভ্য ভূমি ব্যবহার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা; প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট সকল দুর্যোগের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দুর্যোগ সহনীয় একটি অংশগ্রহণমূলক ও হালনাগাদ মৌজা ভিত্তিক ড্যাপ তৈরি এবং তা প্রতি ৫ বছর অন্তর পর্যালোচনা ও পরিচালনা করা।
এবং বৃহত্তর ঢাকা মহানগরীসহ পারিপার্শ্বিক গাজীপুর, সাভার, কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকা নিয়ে অবিলম্বে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট সকল দুর্যোগ সহনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক, পরিবেশবান্ধব, জনবান্ধব ও বৈষম্যহীন আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তিনধাপ (স্ট্রাকচার প্ল্যান, আর্বান এরিয়া প্ল্যান ও ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান) ভিত্তিক ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন, যেখানে সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ, সেনদাই চুক্তি, শূন্য কার্বন নিঃসরণ, কার্বনমুক্তকরণ ইত্যাদি আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির যথাযথ সংযোজন নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্থপতি আবু সাইদ এম আহমেদ বলেন, আমরা বহুদিন ধরে রাজউকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো প্রতিফলন পাইনি, তাই আজ জনগণের দাবি ও অধিকার তুলে ধরতে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। জনদুর্ভোগ এড়াতে, ভবিষ্যতের ঢাকা বাঁচাতে, বাসযোগ্য নগর গড়তে এবং নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লক্ষ মানুষের স্বার্থ রক্ষায় আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ জনগণই পারে টেকসই, ন্যায্য ও সমৃদ্ধ ঢাকা গড়ে তুলতে। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে এখনই দরকার এই ড্যাপ বাতিল করা এবং সংশোধিত জনবান্ধব নতুন কার্যকর ড্যাপ প্রণয়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক স্থপতি ড মাসুদ উর রশিদ বলেন, ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ একটি দলিল যা টাউন ইম্প্রোভমেন্ট এ্যাক্ট, ১৯৯৫ এর আওতায় প্রকাশ করা হয়। গেজেট করা ড্যাপ নিয়ে মহানগরীর সকল স্তরের অংশীজনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
পরবর্তীতে অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার প্রেক্ষিতে ড্যাপের কতিপয় অনুচ্ছেদ সংশোধনী আকারে গেজেট করে পুনঃপ্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। কিন্তু এর পরেও অংশীজনের মধ্যকার বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিরাজমান থাকে এবং পুনরায় সংশোধনের জন্য মতামত ব্যক্ত করা হয়।
তিনি বলেন, কিছু গোষ্ঠির স্বার্থে তরিঘরি করে ড্যাপ রচনা করা হয়। পরবর্তী সময়ে গণশুনানী উপেক্ষা করে প্রহসনমূলক সংশোধন করা হয়। আইনী ব্যত্যয়, প্রকাশিত তথ্যের অপর্যাপ্ততা, প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, পরিবেশ বিপর্যয় (কৃষি জমি বিনষ্ট ও প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট), ভবন নির্মাণের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির বৃদ্ধি, বৈষম্যমূলক নীতির প্রয়োগ, জনভোগান্তি বৃদ্ধিসহ অসংখ্য অসংগতি নির্ভর এই ড্যাপ (২০২২-৩৫) বর্তমানে ভবন নির্মাণ শিল্পে স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে। শহরের নাগরিক বাসযোগ্যতা এবং পরিবেশ আজ বিপন্ন করে তুলেছে। তার প্রমাণ ঢাকা শহর ড্যাপ প্রণয়নের পরে গত চার বছরে বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ১৩৮ থেকে ১৭১-এ নেমে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সহ-সভাপতি স্থপতি মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, স্থপতি নওয়াজীশ মাহবুব প্রমুখ।
এনআর/