আমিরুল ইসলাম লুকমান >>
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান দেশের পররাষ্ট্র নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস যেহেতু একসূত্রে গাঁথা—তাই আমাদের মধ্যে দেয়াল নয়, সেতু তৈরি হওয়া উচিত।’
শনিবার (২৭ জুলাই) আফগানিস্তান ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে পেজেশকিয়ান জানান, তার প্রশাসনের অগ্রাধিকার হবে আফগানিস্তান, তুরস্ক, পাকিস্তান, ইরাকসহ আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইউরোপের মতো খোলা সীমান্ত চাই, যেখানে আঞ্চলিক ঐক্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্ভব। আমাদের আঞ্চলিক অগ্রাধিকার নির্ধারণে এখনই সময়।’
তবে, প্রেসিডেন্টের এই আহ্বান এমন এক সময়ে এসেছে যখন ইরান পূর্ব সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে। আফগান সীমান্তে ৩৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ইউরো।
সম্প্রতি ইরানে আফগান অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড়, সহিংস গ্রেপ্তার এবং জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এর ফলে আফগানিস্তানে একটি মানবিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আফগান ভাই-বোনদের সঙ্গে আমাদের আচরণ মানবিক হতে হবে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছি যাতে প্রশাসনিক গাফিলতিতে কোনো ভুল বার্তা না যায়।’
একই সঙ্গে তিনি জানান, উপযুক্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে তিনি আফগানিস্তান সফরে যেতে প্রস্তুত আছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সফর দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ‘নতুন অধ্যায়’ খুলে দিতে পারে।
যদিও ইরান তালেবান সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে, তবে এখনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। এর আগে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কূটনীতিকরা একাধিকবার কাবুল সফর করেছেন, আবার তালেবান প্রতিনিধিরাও তেহরান গেছেন।
সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যেও ইরান দুই দেশের মধ্যকার ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বন্ধনকে সামনে রেখে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে বলে জানায় প্রেসিডেন্টের কার্যালয়।
সূত্র: আফগানিস্তান ইন্টারন্যাশনাল নিউজ।
এআইএল/