বাংলাদেশের ইতিহাসে বহুল আলোচিত জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শুরু হয়েছে। এই মামলাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী স্বৈরাচার’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
রোববার (৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই মামলার শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে শুনানি চলে। মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে নিরাপরাধ সাধারণ মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করা হয়েছে।
শুনানির সূচনায়, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আজকের দিনটি ইতিহাসে একটি মোড় পরিবর্তনের দিন। হাসিনার মতো মিথ্যাবাদী স্বৈরাচার পৃথিবীতে আর কেউ জন্মায়নি। মিথ্যার ওপর পিএইচডি করতে চাইলে শেখ হাসিনার কাছেই শিখতে হবে।” তিনি বলেন, পৃথিবীর সব স্বৈরাচারের যদি কোনো সমিতি গঠন হয়, তবে শেখ হাসিনাই হবেন সেই সংগঠনের সভাপতি।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের স্বার্থে এই স্বৈরাচার ও তার সহযোগীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত। তিনি আদালতের সামনে বিভিন্ন স্বৈরাচার শাসকের পতনের ইতিহাস তুলে ধরেন। ট্রাইব্যুনালে মামলার সূচনা বক্তব্য রাখেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বিচারপতিরা ছিলেন— মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার, মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং মো. মোহিতুল হক।
এই মামলায় আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক থাকলেও, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বর্তমানে কারাবন্দি এবং তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মামলার বিচার কার্যক্রম ট্রাইব্যুনালের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। আদালতে উপস্থিত থেকে আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজেকে দোষী হিসেবে স্বীকার করে বলেন, “জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় আমরা যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছি, তা সত্য। আমি রাজসাক্ষী হয়ে পুরো বিষয়টি আদালতে তুলে ধরতে চাই।”
এরপর ট্রাইব্যুনাল ৫টি অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। এর আগে ১০ জুলাই আদালত শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। ১ জুলাই শুনানি শেষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের অব্যাহতির আবেদন করেছিলেন, যা ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দেয়।
১৭ জুন পলাতক দুই আসামিকে আত্মসমর্পণের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। হাজির না হওয়ায় তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার চলছে। ১ জুন, মামলার অভিযোগ আমলে নেওয়ার সময় শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়। প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে সেদিন চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম, আব্দুস সোবহান তরফদার এবং মিজানুল ইসলাম আদালতে অভিযোগ পড়ে শোনান।
এনআর/