ভারতে সন্ত্রাসবাদের নামে হাজারো নির্দোষ মুসলমানকে বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখা হলেও প্রকৃত অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে মুক্ত, এমনই অভিযোগ তুলেছেন বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার পিনাকী ভট্টাচার্য। সম্প্রতি মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় প্রধান হিন্দুত্ববাদী অভিযুক্তদের খালাস পাওয়ার ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে রমজান মাসে মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও শহরে একটি মোটরসাইকেলে পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে নয়জন মুসলমান নিহত হন। তদন্তে দেখা যায়, ওই মোটরসাইকেলটি ছিল হিন্দুত্ববাদী নেত্রী ও পরে বিজেপি সাংসদ হওয়া সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুরের নামে নিবন্ধিত। মামলায় অভিযুক্ত করা হয় তিনিসহ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিত ও আরও কয়েকজনকে।
প্রাথমিক তদন্তে মহারাষ্ট্র ATS এবং পরবর্তী সময়ে NIA জানায়, এই হামলার পেছনে একটি হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক জড়িত। তবে দীর্ঘ ১৬ বছর পর আদালত সব অভিযুক্তকে খালাস দেয়।
পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, “যে দেশে হাজার হাজার মুসলমানকে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়ে জেলে পোরা হয়, কিন্তু পরবর্তীতে কোর্টে ৯৮ শতাংশ নির্দোষ প্রমাণিত হয়, সে দেশে আসল অপরাধীদের চিহ্নিত করা তো দূরের কথা, তাদের বিচারই হয় না।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “সাধ্বী প্রজ্ঞার বাইক ব্যবহার করে যখন বিস্ফোরণ হয়, তখন ATS-এর তৎকালীন প্রধান হেমন্ত কারকারে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ডিসেম্বরে তিনি হিন্দুত্ব সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক নিয়ে হোয়াইট পেপার প্রকাশ করবেন। কিন্তু তার আগেই নভেম্বর মাসে মুম্বাই হামলার সময় তিনি রহস্যজনকভাবে নিহত হন। তার দেহে পাওয়া গিয়েছিল ৯ মিমি বুলেটের চিহ্ন, যা সেই হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের সঙ্গে মেলেনি।”
তিনি রামজি কালসাংরার নিখোঁজ হওয়া, এবং অসীমানন্দের স্বীকারোক্তির কথাও স্মরণ করিয়ে দেন—যেখানে তিনি বলেছিলেন, হায়দরাবাদের মক্কা মসজিদ হামলা এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী ঘটনায় নির্দোষ মুসলমানদের ফাঁসানো হয়েছে।
সম্প্রতি ২০০৬ সালের মুম্বাই ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় ১২ জন মুসলমান প্রায় ১৮ বছর জেল খাটার পর হাইকোর্টে খালাস পেয়েছেন। পিনাকী প্রশ্ন তোলেন, “যদি তারা নির্দোষ হয়, তাহলে প্রকৃত অপরাধীরা কে? কেন তাদের চিহ্নিত করা হয়নি? কার স্বার্থে তদন্ত থামানো হয়?”
তিনি বলেন, “ভারতের পুলিশ বহুবার বাংলাদেশি ইসলামপন্থী ও রোহিঙ্গাদের দোষারোপ করেছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশিকে আদালতে দোষী প্রমাণ করা যায়নি।”
পিনাকীর ভাষায়, “ভারতে বিচারব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন হিন্দুত্ববাদী অপরাধীদের আড়াল করতে সচেষ্ট, আর নির্দোষ মুসলমানদের বলির পাঁঠা বানাতে কোনো দ্বিধা নেই।”
হাআমা/