ভারতের কর্ণাটক হাইকোর্ট প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ. ডি. দেবেগৌড়ার নাতি ও জনতা দল (সেক্যুলার)-এর প্রাক্তন সংসদ সদস্য প্রজ্বল রেভানাকে ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেইলের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।
একইসঙ্গে আদালত ভুক্তভোগী নারীকর্মীকে ১১ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
শনিবার (২ আগস্ট) ডেইলি জং সূত্রে জানা গেছে, রায় ঘোষণার পর আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন রেভানা। এর আগে যৌন নিপীড়নের একাধিক অভিযোগের কারণে জনতা দল (সেক্যুলার) থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। দেবেগৌড়ার জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ) বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মিত্রদল।
জানা গেছে, ৪৭ বছর বয়সী এক গৃহকর্মী অভিযোগ করেন, তিনি ২০২১ সাল থেকে প্রজ্বল রেভানার ফার্ম হাউসে কাজ করছিলেন। এই সময় তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় এবং সেই ভিডিও ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ভিডিও ফাঁস করার হুমকি দিয়ে তাকে দীর্ঘ সময় চুপ করিয়ে রাখা হয়।
মামলার তদন্তে উঠে আসে, ধর্ষণের সময় ভুক্তভোগীর পরিহিত শাড়িটি ফরেনসিক পরীক্ষায় উপস্থাপন করা হয়, যেখানে শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ মেলে। তদন্তে আরও জানা যায়, বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন স্থানে নারীদের উপর যৌন নিপীড়নের ৩ থেকে ৫ হাজার ভিডিও উদ্ধার হয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগেই অভিযুক্ত প্রজ্বল রেভানাকে দেখা গেছে। ভিডিওগুলোতে ভুক্তভোগীদের মুখ অস্পষ্ট করা হয়নি এবং তাদের অনেককে সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়েছিল।
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর মামলার বিচার শুরু হয় এবং ১৪ মাসের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হয়। আদালতে ২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় এবং ঘটনাস্থল ও ভিডিও ক্লিপের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করা হয়। তদন্ত দল মোট ১২৩টি আলামতসহ ২ হাজার পৃষ্ঠার রিপোর্ট আদালতে দাখিল করে।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ভোটের পর প্রজ্বল রেভানার বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর তিনি জার্মানিতে পালিয়ে যান। এক মাস পর দেশে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার দল জনতা দল (সেক্যুলার) থেকে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
এই রায় ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে এবং প্রভাবশালী রাজনীতিক পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচার এবং কঠোর শাস্তির নজির তৈরি করেছে।
সূত্র: ডেইলি জং।
অনুবাদ: আমিরুল ইসলাম লুকমান
এআইএল/