হেফাজতের ঐতিহাসিক বিবৃতিতে আন্দোলনে গতি, রাজপথে কওমি ঢল; আত্মগোপনে ইসলামাবাদী

হাসান আল মাহমুদ

by hsnalmahmud@gmail.com

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট। ছাত্রজনতার ডাকে ঘোষিত এক দফার ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর আজকের বিবৃতিটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নতুন গতি এনেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিবৃতি প্রকাশের পরদিনই কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ঢাকামুখী ঢল নেমে আসে রাজপথে। আন্দোলনের মোড় ঘোরানো সেই মুহূর্তকে অনেকেই বলছেন “গণআন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট”।

‘ছাত্রজনতার এক দফার ডাকে সবাই ঢাকা চলুন’—এই আহ্বানে দেয়া বিবৃতিতে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, ‘এটা আমাদের নয়া মুক্তির লড়াই। যারা আমাদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ করেছে, তাদের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের সময় এখন।’

বিজ্ঞাপন
banner

তিনি দেশবাসীকে রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে ছাত্রজনতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজপথে নামার আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে তিনি ২০১৩ সালের ৫ মের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘ওই আগুন আজও আমাদের বুকে দাউদাউ করে জ্বলছে। শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।’

তিনি কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারি দমন-পীড়নেরও তীব্র নিন্দা জানান এবং বলেন, ‘এই জালিম শক্তিকে আর কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না। ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের রুখে দাঁড়াতেই হবে।’

বিবৃতিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশেষ করে কওমি ছাত্রদের মধ্যে তীব্র সাড়া ফেলে। ৫ আগস্ট ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্ররা ঢাকার দিকে রওনা হয়। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও প্রবেশপথে তাদের বড় বড় জমায়েত চোখে পড়ে।

এ বিষয়ে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে লিখেন, ‘৪ আগস্ট ২০২৪—হেফাজত আমীরের সেই ঐতিহাসিক বিবৃতি ছড়িয়ে পড়ার পর পরদিন ভোরে কওমি ছাত্ররা ঢাকায় নেমে আসে। আর এটাই ছিল আন্দোলনের বাঁকবদলের মুহূর্ত। সেই চাপেই আজিজুল হক ইসলামাবাদী ভাই আত্মগোপনে চলে যান।’

এই বিবৃতির কারণেই আমাকে আত্মগোপনে যেতে হয়: মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী

এই ঐতিহাসিক বিবৃতির মূল প্রস্তুতকারী ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ৩৬ নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘ছাত্রজনতার এক দফা কর্মসূচির প্রতি হেফাজতের অবস্থান পরিষ্কার করতে আমরা বিবৃতিটি প্রস্তুত করি। আমীরে হেফাজতের সম্মতিক্রমে তা ৪ আগস্ট দুপুরে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই ফ্যাসিস্ট হাসিনার রাষ্ট্রযন্ত্র আমাকে গ্রেফতারের জন্য উঠেপড়ে লাগে।’

তিনি বলেন, ‘সে সময়ের পরিস্থিতি আজ কল্পনা করাও কঠিন। কী পরিমাণ ঝুঁকি নিতে হয়েছিল তা আমি আর আল্লাহই জানি। আমাকে কোথাও একঘণ্টার বেশি থাকা যায়নি। অবশেষে ঢাকার একটি কওমি মাদরাসায় গিয়ে আশ্রয় নিই।’

ইসলামাবাদী জানান, ‘সেই মাদরাসার মুহতামিম সাহেব আমাকে সর্বোচ্চ সহায়তা করেন। ছাত্ররাও আমাকে রক্ষা করতে জানবাজি রাখে। মোবাইল ছিল এক জায়গায়, আমি আরেক জায়গায়। বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সে এক অবর্ণনীয় সময়।’

তিনি বলেন, ‘বিবৃতিটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আমানত। সেটি সময়মতো প্রকাশ করতে পেরেছি, এটাই আমার তৃপ্তি। সেই বিবৃতির পরদিনই কওমি ছাত্ররা ঢাকায় নেমে আসে, এবং রাজপথে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এজন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি।’

হাআমা/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222