আজ ৫ আগস্ট। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। এক বছর আগে, ২০২৪ সালের এই দিনে, দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল। দিনটিকে ‘মুক্তির দিন’ হিসেবে উদযাপন করছে দেশবাসী।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুর ৩টা। সেনাপ্রধানের ঘোষণার আগেই দেশের সর্বস্তরের মানুষ পতাকা হাতে রাজপথে নেমে আসে। ছাত্র, শিক্ষক, ইমাম, কৃষক, বৃদ্ধ—সবাই একত্র হয়ে শ্লোগান তোলে: “বাংলাদেশ, বাংলাদেশ!” রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত সেই বিজয় দিনটি আজ পূর্ণ করেছে এক বছর।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ উপলক্ষে ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, “বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধে ৫ আগস্ট চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।” ইউনূস বলেন, “জুলাই আমাদের নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছে—একটি ন্যায়ভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন।”
আন্দোলনের সূচনা
আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে। মেধা ভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন অল্প সময়েই রাষ্ট্রবিরোধী দমননীতির প্রতিবাদে রূপ নেয়। আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট ছিল ১৬ জুলাই রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু এবং চট্টগ্রামে ছাত্রদল নেতা ওয়াসিমের শাহাদাত। আন্দোলন তখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
৩ আগস্ট সরকার আলোচনার আহ্বান জানালেও ছাত্র-জনতা তা প্রত্যাখ্যান করে। শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে ঘোষিত হয় এক দফা—সরকার পতন। একই দিনে সংগীতশিল্পীদের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে একই দাবি ওঠে। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয় এবং তা ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করে।
সেনাবাহিনীর অবস্থান ও জনতার বিজয়
৩ আগস্ট সেনা সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এক অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিষ্কার করে জানান, তারা জনতার বুকে গুলি চালাতে পারবেন না। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে।”
৫ আগস্ট সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যারিকেড উপেক্ষা করে লাখো মানুষ রাজধানীতে প্রবেশ করে। ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান স্থানে জনতার ঢল নামে। শাহবাগ, শহীদ মিনারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগ
৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও এএফপি নিশ্চিত করে। তারা ত্রিপুরা হয়ে দিল্লিতে পৌঁছান। এরপরই দেশজুড়ে শুরু হয় উল্লাস। গণভবনে পতাকা উত্তোলন করে বিজয় উদযাপন করে জনগণ। রাজপথে রাজপথে ছড়িয়ে পড়ে স্লোগান— “পলাইছে রে পলাইছে, শেখ হাসিনা পলাইছে।”
বাংলাদেশে নতুন সূর্যোদয়ের সেই দিনটি আজও স্মরণ করে জাতি, শ্রদ্ধা জানায় শহীদদের। একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয় নিয়ে ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষ ৫ আগস্টকে বিজয়ের দিন হিসেবে স্মরণ করে যাচ্ছে।
হাআমা/