কলকাতা উপনগরীর এক ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায় চুপিসারে গড়ে উঠেছে এক রাজনৈতিক ঘাঁটি, যার মূল ঘনীভূত কেন্দ্র একটি আটতলা ভবনের ওপরাংশে। সাইনবোর্ডহীন, ছবি-মুক্ত একটি সাধারণ অফিসরূপে পরিচিত এই স্থানটি আদতে পলাতক আওয়ামী লীগের বিদেশভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার গোপন কেন্দ্র।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর একে একে কলকাতা এবং আশপাশের অঞ্চলে জড়ো হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অগণিত নেতা। কেউ ভাড়া নিয়েছেন ফ্ল্যাট, কেউ আবার পরিবারসহ চলে এসেছেন। জানা যাচ্ছে, অন্তত ৮০ জন প্রাক্তন ও বর্তমান সংসদ সদস্য, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তারা এখন কলকাতায় অবস্থান করছেন।
কলকাতার এই ‘পার্টি অফিস’-এর আয়তন মাত্র ৫০০-৬০০ স্কয়ার ফিট। পূর্ববর্তী ভাড়াটিয়ার রেখে যাওয়া চেয়ার-টেবিলেই চলে বৈঠক। বড় কোনো মিটিং হলে আশপাশের রেস্তোরাঁ বা ব্যাঙ্কোয়েট হলই ভরসা। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এখানে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। স্থানীয়রাও জানেন না এই ‘অফিস’-এর প্রকৃত পরিচয়। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া এধরনের কার্যক্রম সম্ভব হতো না।
গত এক বছরে ভার্চুয়াল মাধ্যমেই চলেছে দলটির কর্মকাণ্ড। হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, লাইভ স্ট্রিমসহ নানা ডিজিটাল মাধ্যমে দেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন পলাতক নেতারা। ভারতে থাকা শেখ হাসিনা মাঝেমধ্যে অনলাইন আলোচনায়ও অংশ নিচ্ছেন।
৩১ জুলাই দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতাদের এক গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যদিও তা কোথায় হয়েছে বা কী আলোচনা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি। সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বার্তা—সবই ভার্চুয়ালি পরিচালিত হচ্ছে।
ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারাও ভারতে অবস্থান করছেন।
তবে প্রশ্ন উঠেছে—এই নেতাদের অর্থায়ন কীভাবে হচ্ছে? কেউ বলছেন, প্রবাসে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীরা সহায়তা করছেন। কারও পরিবার বিদেশ থেকে অর্থ পাঠাচ্ছে, কেউ নিজেদের সঞ্চয় খরচ করছেন। অতীতের বিলাসী জীবনযাপন থেকে নেমে এসে এখন তারা কেউ গণপরিবহন ব্যবহার করছেন, কেউ বা একসাথে ভাগাভাগি করে ফ্ল্যাটে থাকছেন।
তবু তারা ফিরে আসার স্বপ্ন ছাড়েননি। দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের বলেন, “লড়াই ছাড়া উপায় নেই। দিনক্ষণ ঠিক করে রাজনীতি হয় না।” অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তিতে ব্যর্থতা তুলে ধরে জনমত গড়ার চেষ্টা করছে পলাতক আওয়ামী লীগ।
হাআমা/