যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার এবং হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক দাবি করেছেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি মামলায় তিনি ‘রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলির পাঠা’। লেবার পার্টির এই নেত্রী জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে পদত্যাগের পর এক সপ্তাহ আগে এক সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পারেন তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে টিউলিপ বলেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি হিসেবে তিনি প্রভাব খাটিয়ে তার পরিবারের জন্য ঢাকার পূর্বাচলে একটি জমি নিশ্চিত করেছেন। তিনি এ অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ হাস্যকর’ বলেও উল্লেখ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিচার শুরুর তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ১১ আগস্ট। তিনি নিজে উপস্থিত থাকবেন কি না, এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।
টিউলিপ বলেন, তিনি ব্রিটিশ আইনজীবী হুগো কিথ কেসির পরামর্শ নিচ্ছেন এবং এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক সমন পাননি। তিনি এ পরিস্থিতিকে ‘কাফকায়েস্ক দুঃস্বপ্ন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন—অর্থাৎ নিপীড়ক আমলাতন্ত্রের উদ্ভট ও অযৌক্তিক জটিলতার মধ্যে আটকে থাকা।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকলেও দোষী সাব্যস্ত হলে বিষয়টি নতুন করে বিচার হওয়ার সুযোগ পাবে।
২০১৯ সালে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসার পর টিউলিপ অর্থনৈতিক সচিব ও সিটি মন্ত্রী হিসেবে কাজ করছিলেন। এই সময় বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছিল, যখন ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসন ক্ষমতা ভেঙে পড়ে এবং শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা ভারত পালিয়ে যান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানে টিউলিপ সিদ্দিকের নানা এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অনেক সদস্য নিহত হন। সে ট্র্যাজেডি স্মরণ করে টিউলিপ বলেন, তিনি খালার পক্ষে সাফাই গাইতে আসেননি, বরং বাংলাদেশের জনগণ যেন ন্যায়বিচার পায় তা চান।
টিউলিপের দাবি, ২০২৪ সালের শেষে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পর থেকেই বাংলাদেশের ‘কদর্য রাজনীতি’ তার জীবনে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ে, যেমন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার মিথ্যা অভিযোগ।
২০০৪ সালে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় তাকে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। তবে টিউলিপ এই ফ্ল্যাট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যহীন উল্লেখ করেন এবং দাবি করেন, ফ্ল্যাটটি তার বাবা-মা কিনেছিলেন।
নিরাপত্তার কারণে তিনি ক্রিকলউডে নিজের বাড়ি থেকে অন্য একজনের বাড়িতে স্থানান্তরিত হন বলে জানান।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের অভিযোগের পর টিউলিপ নিজেকে ব্রিটিশ মন্ত্রীদের নৈতিক মানদণ্ড উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে উপস্থাপন করেন এবং তদন্ত শেষে তিনি অভিযোগ থেকে মুক্তি পান।
স্টারমারের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও বিভ্রান্তি এড়াতে তিনি পদত্যাগ করেন, তবে অভিযোগের আগ্রাসন থেমে না। বর্তমানে বাংলাদেশে নির্বাচনের অনিশ্চয়তা এবং আন্তর্জাতিক তদন্ত ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে টিউলিপের পরিস্থিতি জটিলতর।
তিনি যুক্তরাজ্যে সফরকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এছাড়াও যুক্তরাজ্যের অপরাধ দমন সংস্থা শেখ হাসিনা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পত্তি জব্দ করেছে, যার সঙ্গে টিউলিপের কোনো যোগ নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।
হাআমা/