জুলাই অভ্যুত্থানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা

by Kausar Labib

১৫ জুলাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে পুলিশ, যা আপামর জনতার মতো প্রবাসীদের মনেও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবাসীরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার প্রতিবাদ জানান। কিন্তু ১৬ জুলাই যখন আন্দোলনের আইকনিক হিরো আবু সাঈদ দুই হাত মেলে বুক পেতে নিজেকে বিলীন করে দিলেন, তারপর থেকে আর কেউ ঘরে বসে থাকেনি।

দল-মত নির্বিশেষে প্রবাসীরা মাঠে নেমে পড়েন। প্রবাসীদের কাছে সেই দিনগুলো বড়ই বিস্ময়ের। দেদারছে মানুষ মরছে; বাদ যাচ্ছে না নারী-শিশু, শ্রমিক-বৃদ্ধ কেউই। অথচ বাড়িতে থাকা ভাইটি ঠিক বাড়িতে আছে কি না সেই খবরটুকু নেওয়ার সুযোগটাও বন্ধ করে রেখেছিল ফ্যাসিস্ট সরকার।

বিজ্ঞাপন
banner

জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়াতে কার্পণ্য দেখাননি প্রবাসীরা। দেশে দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছেন। সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের কাছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। কোনো কোনো দেশের স্থানীয় আইনের বাইরে গিয়েও বিক্ষোভ করে কারাবরণ করতে দ্বিধা করেননি তারা।

গণঅভ্যুত্থানকে সমর্থন জানিয়ে দুবাইয়ে আয়োজিত বিক্ষোভকারীরা জানতেন, এ দেশে এমন মিছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারা জানতেন, এই অপরাধের সাজা কী হতে পারে। সব জেনেই দেশ ও মানুষের টানে সব ভয়কে উপেক্ষা করে তারা আরব আমিরাতের মতো দেশে মাঠে নেমে পড়েন। বিক্ষোভ করেন, মিছিল করেন। বিনিময়ে স্বাচ্ছন্দ্যে কারাবরণ করেন।

ফ্রান্সেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। শুরুতেই ঐতিহাসিক ন্যাশন এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন ফ্রান্সের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। তারপর একে একে ঐতিহাসিক রিপাবলিক চত্বর, বাস্তিল চত্বরসহ বিভিন্ন জাগায় বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন হয়। এসব কর্মসূচির পাশাপাশি প্যারিসে সংস্কৃতিকর্মীরা আয়োজন করেন প্রতিবাদী কবিতাপাঠের আসর। অনুষ্ঠানে কবিরা জুলাই বিপ্লবকে সমর্থন জানিয়ে রচিত কবিতা পাঠ করেন, শিল্পীরা সুর তোলেন প্রতিবাদী গানে।

রিপাবলিক চত্বরে সব সময়ই নানা ধরনের বিক্ষোভ হয়ে থাকে। বাংলাদেশিরাও এর আগে একাধিকবার বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ করেছেন। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের বিক্ষোভে যে পরিমাণ প্রবাসীরা অংশ নেন, তা ছিল কল্পনাতীত। পেছনের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে সবগুলো বিক্ষোভ কর্মসূচিতেই মানুষের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বসহকারে দেখছেন স্থানীয় প্রবাসীরা। অন্যান্য বিক্ষোভে নানা কারণে ফরাসি পুলিশের হয়রানির শিকার হলেও এবার ফরাসি পুলিশ ছিল আন্দোলনের অনুকূলে। আগে কখনও মাত্রাতিরিক্ত জনসমাগম হলে প্রশাসন থেকে সঙ্গে সঙ্গে কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়া হতো; কিন্তু জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনে পুলিশ এমন কোনো ভূমিকায় যায়নি। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাতে তারাও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন। একইভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে প্যারিসের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অসংখ্য ফরাসি নাগরিক অংশ নেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে শুধু ফ্রান্স প্রবাসীরাই নন, ইতালি, আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানিসহ অন্যান্য দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের ভূমিকা কোনো অংশেই কম নয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীরা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন, ছব্বিশের বিপ্লবে সেই ভূমিকা ছিল বহুগুণ বেশি। এবারের অভ্যুত্থানে প্রবাসীদের সাহসী পদক্ষেপ ছিল রেমিট্যান্স শাটডাউন। এটি ফ্যাসিস্ট সরকারের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রবাসীদের এই রেমিট্যান্স শাটডাউন পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা বলেই বিবেচ্য হচ্ছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী হিসেবে অবস্থানরত আছেন। যদিও বেসরকারি হিসেবে সংখ্যাটি দেড় কোটিরও বেশি, যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ। অথচ এই প্রবাসীরা দেশে সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত। নাগরিক অধিকার থেকে জাতীয় অধিকার, কোনো খাতায়ই নাম নেই প্রবাসীর। অথচ এরাই দেশের দুর্দিনে নিজেকে বাজি রেখে সর্বোচ্চটা বিলিয়ে দেন।

এমএনএকে/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222