ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার চায় দেশের সব রাজনৈতিক দল। দলের নেতারা বলেছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে যত হত্যা, গুম, অপহরণ ও নির্যাতন হয়েছে, এর দায় তাকে নিতেই হবে। এছাড়া, জুলাই-আগস্টে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকাসহ সারাদেশে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, তার দায় শেখ হাসিনা এড়াতে পারেন না।
রাজনৈতিক নেতারা বলেছেন, শেখ হাসিনার বিচার প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধের বিচার নয়। বিচার না হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলতেই থাকবে। সুতরাং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করে কেউ যাতে পার পেতে না পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য বিচার হওয়াটা দরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) এক সাক্ষাৎকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ‘নিষ্ঠুরতার’ বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। না হলে বাংলাদেশের মানুষের শান্তি হবে না। যে নৃশংসতা তিনি দেখিয়েছেন, তার সমাধান বিচারের মাধ্যমেই হতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে আইনগত প্রক্রিয়া জোরেশোরে চলছে। তবে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য একটা প্রয়োজনীয় সময়ের ব্যাপার আছে। আমরা বারবার বলছি, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনতে চাই। আশা করছি তাকে দ্রুত দেশে ফেরত এনে বিচারের সম্মুখীন করা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গুলি চালিয়ে হত্যা, গুম, অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে এখন পর্যন্ত ২৫০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলার সংখ্যা ২১৩টি।
দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইনে দায়ের হওয়া এসব মামলার পাশাপাশি গুম, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রত্যক্ষ অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করা হয়। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং এ পরোয়ানা তামিল করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য সরকারের প্রতি নির্দেশনা জারি করে।
ট্রাইব্যুনালের এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করার উদ্যোগ নেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই অংশ হিসেবে আইন মন্ত্রণালয়ের অভিমত নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে কূটনৈতিক বার্তা (নোট ভারবাল) পাঠিয়েছে দিল্লির কাছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত কখনোই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দেবে না। কেননা শেখ হাসিনার সকল অপরাধ এবং দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের পেছনে ভারতের প্রত্যক্ষ মদদ এবং অন্ধ সমর্থন প্রধানতম কারণ। অতএব শেখ হাসিনাকে ফেরত দিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার অর্থ হচ্ছে ভারতের ভুল স্বীকার করে নেওয়া এবং ষড়যন্ত্রের তথ্য বাংলাদেশের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া। যেটা কখনোই ভারত হতে দেবে না। তাই বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল শেখ হাসিনার বিচার প্রবলভাবে দাবি করলেও আদতে ভারত কতটুকু তাতে কর্ণপাত করবে সেটি নিশ্চয়ই দেখার বিষয়। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী নাকি আওয়ামী লীগের সঙ্গে একতরফা পুরনো সম্পর্ককে বাংলাদেশের সম্পর্ক হিসেবে বিবেচনা করে।
বিশ্লেষকরা আরও মনে করেন, ভারতের এই আচরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে।
এমএনএকে/