যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউজে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নির্বাচনী ক্যাম্পেইন থেকেই বড় ধরনের পরিবর্তনের বার্তা দিয়ে আসছেন বিতর্কিত এই রিপাবলিকান নেতা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্যাম্পেইনে দেওয়া বক্তব্য আর সরকার চালানো এক কথা নয়।
ট্রাম্প সরকার পরিচালনার জন্য যেসব ব্যক্তিদের বাছাই করেছেন, তাদের অগ্রাধিকারই নির্ধারণ করে দেবে ট্রাম্প আসলে কতটা বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটাতে পারবেন।
প্রথমেই ট্রাম্পকে পরীক্ষা দিতে হবে পররাষ্ট্র নীতিতে। শুরু থেকেই ট্রাম্প বলে আসছেন ইউক্রেন যুদ্ধ একদিনের মধ্যে শেষ করে দেবেন। যদিও এ ব্যাপারে কাজ করতে তাকে বেগ পেতে হবে। ট্রাম্প যদি নিরাপত্তা গ্যারান্টি দিয়ে ইউক্রেনকে ভূখণ্ড হারানোর বিষয়টি গ্রহণ করাতে চাপ দেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেকরা।
তবে তিনি যদি একতরফা বা ভারসাম্যহীন শান্তি চুক্তির জন্য ইউক্রেনকে চাপ দেন তাহলে মূলত পুতিনেরই জয় হবে। তখন ইউক্রেনের অস্তিত্ব নির্ভর করবে ইউরোপের ওপর। এক্ষেত্রে আমেরিকার অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে চীনসহ অন্যরা।
তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ক্ষেত্র হয়ে উঠবে মধ্যপ্রাচ্যও। ইসরাইল ও হামাসকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি করানোর ক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে পারেন ট্রাম্প। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও এক্ষেত্রে ট্রাম্পকে বড় জয় এনে দিতে চাইবেন। তবে ট্রাম্প ইসরাইলকে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের দিকে নাও নিয়ে যেতে পারেন। ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি না দিলে ইসরাইলের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান আদৌ সম্ভব কিনা সেটাও বড় বিষয়।
তাছাড়া ইরানের ওপর আরও কঠোর অবস্থানে যেতে পারেন তিনি। তবে প্রথম মেয়াদের মতো নিষেধাজ্ঞা নীতি কাজে নাও আসতে পারে। কারণ ইরান তেল বিক্রির জন্য এরই মধ্যে একটি ছায়া নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।
কীভাবে চীনকে মোকাবিলা করা যায় সেটা হতে পারে ট্রাম্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ইস্যু। চীনের অর্থনীতি বর্তমানে কিছুটা দুর্বল হলেও ট্রাম্পের প্রথম আমলের চেয়ে চীন অনেক বেশি আগ্রাসী। ফলে দক্ষিণ চীন সাগরে সংকটে পড়তে পারেন ট্রাম্প। তিনি সেখানে ফিলিপাইনকে সহায়তা করবেন নাকি স্থান ত্যাগ করবেন, তারও একটা বড় পরীক্ষা হবে।
শুল্ক নীতিতে ট্রাম্প কতটা ভয়ংকর হতে পারেন সেটা প্রকাশ করবে চীন। এরই মধ্যে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন চীন থেকে আমদানির ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। এটা কি দরকষাকষি নাকি আমেরিকার অর্থনীতিকে চীন থেকে আলাদা করার সত্যিকারের ইচ্ছা, তা ২০২৫ সালেই স্পষ্ট হবে।
তালিকার শীর্ষে চলে আসবে অবৈধ অভিবাসন। অভিবাসীদের গণহারে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াও ঘটতে পারে। ট্রাম্পের প্রথম আমলের ট্যাক্স প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের শেষ দিকে। তাই ট্যাক্স কাটও গুরুত্ব পাবে।
সবমিলিয়ে ট্রাম্পের আমল যে খুব একটা নিরীহ হবে না, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। সেটা আমেরিকাকে আগাবে নাকি থমকে দেবে সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে মুসলিম বিশ্ব ট্রাম্পের আমলকে কীভাবে মোকাবেলা করবে কিংবা কাজে লাগাবে, সে বিষয়ে পলিসি নির্ধারণ করার সময় এখনই। তার জন্য মুসলিম বিশ্বের নেতাদের ভাবতে হবে ট্রাম্পের চেয়ে একধাপ এগিয়ে।
এমএনএএস/