সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ রাখার পক্ষে আলী রীয়াজ

by Kausar Labib

গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং নতুন করে দেশ গঠনে করা হয় ছয়টি সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে একটি হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। গত ১৫ জানুয়ারি এই কমিশন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

এই কমিশনের অন্যতম সুপারিশ ছিল ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’কে মৌলিক নীতির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া।

বিজ্ঞাপন
banner

এই বিষয়টি কিছু মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়া রোধ করতে সুপারিশ করা হয়েছে এবং স্বৈরাচারী শাসন যেন বাংলাদেশে আবার ফিরে না আসে তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সম্প্রতি জাপানভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ।

সংবিধান সংশোধন কমিশন (সিআরসি) ২৫-এর বেশি রাজনৈতিক দল এবং বিশিষ্টজনের মতামত সংগ্রহ করার পর বর্তমান সংবিধানের চারটি মূলনীতি–সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ এবং গণতন্ত্রের মধ্যে শুধু গণতন্ত্রকে রেখে বাকিগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। কমিশনের প্রধান আলী রিয়াজ এই পরিবর্তনের পেছনের যুক্তি দিয়েছেন।

সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাকালীন ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রে সমতা, মানুষের মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের তিনটি মূলনীতি ছিল, যা ১৯৭২ সালের সংবিধানে উপেক্ষিত হয়েছিল। তিনি বলেছেন, প্রথমত, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দেওয়া হয়েছে এবং তার পরিবর্তে ‘বহুত্ববাদ’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তার দাবি, ধর্মনিরপেক্ষতা যেভাবে বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হয়েছে তা শুধু ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সহনশীলতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু বহুত্ববাদী ধারণা এটি থেকে ব্যাপক এবং আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক।

তিনি আরো বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা শুধু বৈচিত্র্যের সহনশীলতার কথা বললেও, বহুত্ববাদ ধর্মীয় বৈচিত্র্যসহ আরো অনেক জাতিগত, সাংস্কৃতিক এবং লিঙ্গভিত্তিক বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দেয়।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বর্তমানে সংবিধানে ‘ইসলাম’ রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্থান পেয়েছে এবং এই ব্যবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে। ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা পরিবর্তনের কোনো সুপারিশ কমিশন করেনি।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রের ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক অন্যান্য অনেক দেশের মতোই থাকবে, যেখানে ধর্ম শুধু একটি প্রতীকী ভূমিকা পালন করবে এবং রাষ্ট্রের কার্যক্রমের প্রভাব সীমিত থাকবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১২১টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করেছি, যার মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধানও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এই পর্যালোচনা থেকে আমরা দেখেছি যে ১৯টি দেশে রাষ্ট্রধর্ম আছে এবং ৭৫টি দেশের সংবিধানে ‘পরমেশ্বরের প্রতি বিশ্বাস’–এর কথা উল্লেখ আছে। অনেক পশ্চিমা দেশেও একটি রাষ্ট্রধর্ম বা একক ধর্মের সরকারি স্বীকৃতি রয়েছে।

এ সময় তিনি বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্রধর্মের অবস্থান নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০১৭ সালে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার জানিয়েছিল, ৮০টিরও বেশি দেশ একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে সমর্থন করে, যা সরকারিভাবে অনুমোদিত ধর্ম হিসেবে অথবা এক ধর্মকে অন্য ধর্মের তুলনায় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। সমীক্ষায় তারা দেখেছে, ১৯টি দেশের মধ্যে ২২ শতাংশ দেশের একটি রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে এবং ২০ শতাংশ দেশ একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়। সুতরাং বাংলাদেশ কোনোভাবেই অনন্য নয়।

আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্র অনুমোদিত একটি ধর্ম থাকলেও রাষ্ট্র এবং ধর্মের সম্পর্ক আলাদা হতে পারে। ইসরায়েলের বার ইলান ইউনিভার্সিটির ধর্ম ও রাষ্ট্র (আরএসএস) সংক্রান্ত গবেষণার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জনাথন ফক্স বলেছিলেন যে এ ধরনের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে ভিন্ন হতে পারে। তিনি যুক্তরাজ্য এবং ইরানকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। উভয় দেশেই রাষ্ট্রধর্ম বা সরকারি গির্জা আছে, তবে এই দুই রাষ্ট্রের কার্যক্রমে ধর্মের ভূমিকা একেবারে বিপরীত।

তিনি বলেন, (প্রস্তাব অনুযায়ী) সংশোধিত সংবিধানে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পর্ক গত কয়েক দশকের মতোই থাকবে। যতক্ষণ না ধর্ম আইনগত ব্যবস্থার উৎস হিসেবে কাজ করছে অথবা রাজনৈতিক–আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে, ততক্ষণ উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। অনেক সময় রাষ্ট্রধর্মগুলো প্রতীকীভাবে বেশি দেখা যায়, এর বাস্তবিক প্রভাব থাকে কম।

এ ছাড়া কমিশন বেশ কিছু সুপারিশ করেছে যাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না হয় এবং ভবিষ্যতে স্বৈরাচারী শাসন ফিরে আসার সুযোগ না থাকে। উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় সংবিধান পরিষদ (এনসিসি) গঠন এবং রাষ্ট্রপতির কিছু ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর থেকে স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়েছে।

এএ/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222