নদী রক্ষায় তিস্তাপাড়ে পদযাত্রায় মানুষের ঢল

by Nur Alam Khan

‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’-স্লোগানে নদী রক্ষার আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনের শুরুতে পদযাত্রায় তিস্তাপাড়ে মানুষের ঢল নেমেছে।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় লালমনিরহাট রেল সেতু থেকে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে পদযাত্রাটি বের হয়ে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা ঘুরে পুনরায় রেল সেতুতে শেষ হয়।

বিজ্ঞাপন
banner

নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবীব দুলুর নেতৃত্বে পদযাত্রাটি ছয় কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টেও পৃথক পদযাত্রায় অংশ নেয় তিস্তাপাড়ের মানুষ।

জানা গেছে, জন্মলগ্ন থেকে খনন না করা তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি আর উজানের ঢলে দুই কূল উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হয় তিস্তাপাড়ে। বন্যা আর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ফসলি জমিসহ স্থাপনা। একই সঙ্গে বর্ষা শেষে মাইলের পর মাইল বালুময় মরুভূমিতে পরিণত হয় তিস্তাপাড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে অনাবাদি পড়ে রয়েছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি।

অন্য দিকে তিস্তা নদীর উজানে ভারত সরকার গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা নদীর পানি একতরফা ব্যবহার করছে। তারা বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে বাংলাদেশ অংশের রংপুর অঞ্চলকে ডুবিয়ে দেয় এবং বর্ষা শেষে মরুভূমিতে পরিণত করে।

এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করে আসছে বাংলাদেশ। যে দাবি আদায়ে বিভিন্ন সময় নানান আন্দোলন করেছে বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তাপাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করলেও ভারতের প্রতি আওয়ামী লীগের নতজানু নীতির কারণে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তাই নতুন করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ তিস্তা পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন।

আন্দোলনে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি সোমবার দুপুরে উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিস্তা নদীর ১২৫ কিলোমিটারের দুই তীরে ৫টি জেলায় ১১টি পয়েন্টে দিনভর নানান আয়োজনে প্রথম দিন অতিবাহিত করে তিস্তাপাড়েই তাঁবুতে রাত যাপন করে হাজার হাজার মানুষ। রাতে রংপুর অঞ্চলের সংস্কৃতি তুলে ধরে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তিস্তাপাড়ের মানুষের সুখ দুঃখের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। যার মাধ্যমে তিস্তার করুণ চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা।

পদযাত্রার মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু করে নদী রক্ষা আন্দোলন। জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে ১২৫ কিলোমিটারের তিস্তা নদীর দুই পাড়। দ্বিতীয় দিনে পদযাত্রার পরে তিস্তা নদীতে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে লাখো মানুষ নদী রক্ষার দাবি জানায়। সন্ধ্যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালি ১১টি পয়েন্টে যুক্ত থেকে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখবেন। সেই বক্তব্য শুনতে অধীর আগ্রহে রয়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষ।

তিস্তাপাড়ের মানুষের দাবি, ভারতের প্রতি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নতজানু নীতির কারণে দীর্ঘকাল ঝুলে ছিল তিস্তা ইস্যু।  কালের পরিক্রমায় আওয়ামী সরকারের পতনের পরে তারেক রহমানের ঘোষণায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায় হবে এমন প্রত্যাশা তিস্তাপাড়ের মানুষের। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে উত্তরবঙ্গের চিত্র। তবেই প্রাণ ফিরে পাবে চিরচেনা খরস্রোতা তিস্তা নদী। আবার কর্মব্যস্ততায় ফিরবে তিস্তা ঘিরে জীবন চলা মাঝি মাল্লাদের ডাক হাঁক।

আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু বলেন, পদযাত্রার মধ্য দিয়ে ঘোষিত কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আর তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে। অবস্থান কর্মসূচিতে কাজ না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তবুও তিস্তার হিস্যা চাই।

এনএ/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222