পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে সাম্প্রতিক জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলার মাধ্যমে আবারও শিরোনামে উঠে এসেছে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। একদল বিচ্ছিন্নতাবাদী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে, তারা পাকিস্তান সরকারকে তাদের রাজনৈতিক দাবির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কে এই বিএলএ? কেন তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এত দীর্ঘকাল ধরে হামলা করে আসছে?
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি বেলুচিস্তানের সবচেয়ে বড় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা অর্জন এবং বেলুচ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই এই গোষ্ঠীটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিএলএ দীর্ঘদিন ধরেই বেলুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বেলুচ জনগণের শোষণ নিয়ে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে আসছে। বেলুচিস্তান প্রদেশ, যা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ এলাকা, সেখানে পাকিস্তান সরকার নিজেদের স্বার্থের জন্য এই সম্পদ শোষণ করছে, আর এ কারণে বেলুচ জনগণের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
১৯৪৮ সাল থেকে চলে আসা সংগ্রাম
বিএলএ তাদের সংগ্রামের মূল ভিত্তি হিসেবে ১৯৪৮ সালকে চিহ্নিত করে। ওই বছর, পাকিস্তান বেলুচিস্তানকে জোরপূর্বক একত্রিত করে নেয় এবং তখন থেকেই বেলুচ জনগণ নিজেদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। তাদের দাবি, ১৯৪৮ সালে সাবেক রাজা কালাতের খানকে জোর করে পাকিস্তানের সঙ্গে একত্রীকরণের চুক্তিতে স্বাক্ষর করানো হয়, যা ছিল তাদের স্বাধীনতা ও অধিকার ক্ষুণ্ণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এরপর থেকেই তারা বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
জাফর এক্সপ্রেস হামলা: বেলুচ লিবারেশন আর্মির একটি নতুন পদক্ষেপ
সাম্প্রতিক হামলা, জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে, যেখানে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিল, এটির মাধ্যমে বিএলএ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। হামলার পর তারা ২১৪ জন যাত্রীকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটক করে এবং পাকিস্তান সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বেলুচ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে আল্টিমেটাম দেয়। পরে পাকিস্তান নিরাপত্তা বাহিনী অভিযানে নেমে ১০৪ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে এবং ১৬ জন বেলুচ বিদ্রোহীকে হত্যা করে।
এই হামলা শুধুমাত্র একটি সামরিক আক্রমণ ছিল না, বরং এটি ছিল বিএলএ’র সেই রাজনৈতিক দাবির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের একটি চেষ্টা, যার মধ্যে রয়েছে বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা এবং তাদের সম্পদের উপর বেলুচ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা।
পাকিস্তান সরকার এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে বিএলএ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। পাকিস্তান সরকার বহুবার বেলুচ লিবারেশন আর্মির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে তবে এসব আক্রমণের ফলে পরিস্থিতি কখনও শান্ত হয়নি। বরং বেলুচ জনগণের মধ্যে এই আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছে।
এদিকে বিএলএ তাদের আক্রমণগুলোকে একটি রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে, যেখানে তাদের মূল দাবি হল বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা এবং সেখানে বসবাসকারী জনগণের ন্যায্য অধিকার।
বেলুচিস্তানের ভবিষ্যৎ: শান্তির আশা বা আরও সংঘর্ষ?
বেলুচিস্তান প্রদেশের পরিস্থিতি এখনও অস্থির। বেলুচ জনগণের স্বাধীনতার জন্য লড়াই ও পাকিস্তান সরকারের শোষণ নিয়ে তাদের ক্ষোভের চিত্র দীর্ঘ সময় ধরে চলছে। BLA তাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তবে এর ভবিষ্যৎ কি? পাকিস্তান সরকার যদি তাদের দাবিগুলো মেনে না নেয়, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। তবে, ভবিষ্যত কি অপেক্ষা করছে তা সময়ই বলবে।
এনএ/