স্টাফ রিপোর্টার>>
সম্পূর্ণ বিনা নোটিশে হঠাৎ করে মিরপুর-১১ বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত জামিয়া মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে একযোগে ১৭ জন শিক্ষককে বহিষ্কার করেছে নতুন কমিটি। এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে মাদরাসার ভেতর বাইরে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা গেছে, চলতি রমজান মাসের শুরুতে ১ মার্চ মাদরাসার নতুন কমিটির সেক্রেটারি নুরুল আমিনের মৌখিক আদেশে ঢাকার এ ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা থেকে দীর্ঘদিন শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত থাকা শিক্ষকদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বহিষ্কারের আগে কারণ দর্শানোর কোনো নোটিশ ইস্যু করা হয়নি। ভুক্তভোগী শিক্ষকদের মতে, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এসব যোগ্য ও প্রাজ্ঞ শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট পতিত শেখ হাসিনা পলায়ন করার পর মাদরাসা-মসজিদের কমিটি নিয়োগে তোড়জোড় চলে। মসজিদের খতিব ও মাদরাসার মুহতামিম পরিবর্তনেরও জোর চেষ্টা শুরু হয়। ওই সময় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের তৎকালীন খতিব মুফতি রুহুল আমিনের জুমা পড়ানোকে কেন্দ্র করে একটি অরাজকতা সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনায় মামলা হয়। সে মামলায় জামিয়া মুহাম্মাদিয়ার তৎকালীন মুহতামিম মুফতি খালেদ সাইফুল্লাহকে বিনা অপরাধে আসামি হয়। মামলার পর মাদরাসার মুহতামিম মুফতি খালেদ সাইফুল্লাহ আত্মগোপনে চলে যান। ফলে মুহতামিমের পদ খালি হয়ে যায়। এদিকে মাদরাসার মসজিদে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত খতিব মুফতি জহিরুল ইসলাম ফারুকিকেও বর্তমান কমিটি বিনা নোটিশে হঠাৎ চাকরিচ্যুত করে।
এরপর মাদরাসার মুহতামিম ও মসজিদের খতিব হিসেবে নতুন নিয়োগ পান মাওলানা আব্দুল বাতেন কাসেমি। তিনি এক সময় এখানকার মুহতামিম ও খতিব ছিলেন। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি উত্তরার একটি মাদরাসার দায়িত্ব নিয়ে মিরপুর থেকে চলে যান। বহিষ্কৃত শিক্ষকদের অভিযোগ, শিক্ষক বহিষ্কারের ঘটনায় নতুন কমিটির সাথে নতুন মুহতামিম মাওলানা আব্দুল বাতেন কাসেমির যোগসূত্র আছে।
আওয়ামী সরকারের পলায়নের পর বর্তমান নতুন কমিটির মাধ্যমে মাওলানা আব্দুল বাতেন কাসেমি মিরপুরের জামিয়া মুহাম্মাদিয়া মাদরাসার পরিচালক ও মসজিদের খতিবের দায়িত্ব নিয়ে ফিরে আসেন। অভিযোগ আছে, তাকে খতিব হিসেবে নিয়োগ দিতেই মুফতি জহিরুল ইসলাম ফারুকিকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শিক্ষক বহিষ্কারের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে মাদরাসার একজন শিক্ষক বলেন, ‘মার্চ মাসের প্রথম তারিখে সেক্রেটারি নুরুল আমিন ফোন করে আমাকে জানান, আমরা মাদরাসা-মসজিদ সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছি। সে সংস্কারের অংশ হিসেবে মাদরাসার কিছু শিক্ষককে বহিষ্কার করা হচ্ছে। সে তালিকায় আপনার নাম আছে। এখন থেকে আপনি বিদায়ী শিক্ষক হিসেবে গণ্য হবেন। আর এ মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস পেয়ে যাবেন। আমাকে পদচ্যুত করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সেক্রেটারি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের পরিপূর্ণ অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’ তবে, এ বিষয়ে সেক্রেটারি নুরুল আমিন কোন পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
শিক্ষক বহিষ্কার সম্পর্কে মাদরাসার একাধিক শিক্ষক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘রাজনৈতিক আদর্শগত ভিন্নতার কারণে আমাদের বলির পাঠা বানানো হয়েছে। আগের কমিটি বা মুহতামিম আওয়ামীপন্থি হয়ে থাকলেও সেখানে শিক্ষকদের কী অপরাধ? শিক্ষকগণ তো কখনো রাজনীতি করেননি। তারা যোগ্যতা বলে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে মাদরাসার শিক্ষক নিয়োগ হয়েছেন। তাদেরকে কেন বহিষ্কার করা হল? যেসব শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের ভেতর বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান অর্জনকারী ও দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ালেখা করা শিক্ষক আছেন, তারা কীভাবে অযোগ্য হলেন? আমরা আমাদের চাকরি ফেরত চাই, অন্যায়ের বিচার চাই।’
শিক্ষক বহিষ্কার ও মাদরাসার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বর্তমান কমিটির সেক্রেটারি নরুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বহিষ্কারের ঘটনা সত্য। মাদরাসার সংস্কার, শিক্ষকদের কিছু দুর্বলতা ও অযোগ্যতার কারণে তাদের অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।’
বিনা নোটিশে একসঙ্গে ১৭ জন শিক্ষককে একযোগে অব্যহতি দেওয়া কোন আইনে করা হয়েছে- এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, ‘এ মাদরাসা-মসজিদের এটাই নিয়ম। আগে থেকে এভাবে চলে এসেছে।’
এছাড়া শিক্ষকদের সার্টিফিকেট যাচাই, বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর সাথে সেক্রেটারির রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। মুহতামিমের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু মুহতামিমের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এনএ/