ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অবশেষে সংশোধিত ওয়াক্ফ আইন কার্যকরে স্থগিতাদেশ জারি করেছে। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এই রায় দেন। নতুন আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে দায়ের হওয়া ৭৩টি পিটিশনের শুনানির পর আদালত এ সিদ্ধান্ত নেয়।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত দেশের কোথাও ওয়াক্ফ বোর্ডে নতুন সদস্য নিয়োগ বা ঘোষিত ওয়াক্ফ সম্পত্তিতে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। পুরোনো ওয়াক্ফ ও ‘ওয়াক্ফ বাই ইউজার’ সম্পত্তিও আগের নিয়মেই বহাল থাকবে।
শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, “১৩শ, ১৪শ শতাব্দীর মসজিদের দলিলপত্র থাকা কঠিন। তা বলে কি এসব ওয়াক্ফ বাতিল হবে?” তিনি সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতাকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, “আপনারা কি বলছেন, আদালতের রায়ে প্রতিষ্ঠিত ওয়াক্ফ এখন আইন দিয়ে বাতিল করা যাবে?”
আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, “ওয়াক্ফ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হাজার বছর আগের ওয়াক্ফের দলিল এখন চাওয়া হচ্ছে, যা সংবিধানের ২৬ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করে।”
সংশোধিত আইনে কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ কাউন্সিল ও রাজ্য বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার বিধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আদালত। প্রধান বিচারপতি বলেন, “হিন্দু দেবোত্তর বোর্ডে যদি মুসলিম সদস্য না থাকেন, তবে ওয়াক্ফ বোর্ডে হিন্দু সদস্য রাখা হবে কেন?”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৮ লাখ ওয়াক্ফ সম্পত্তির মধ্যে প্রায় ৪ লাখই ‘ওয়াক্ফ বাই ইউজার’। সংশোধিত আইনে বলা হয়েছিল, কেবল দলিলপত্রের ভিত্তিতে ওয়াক্ফ নির্ধারিত হবে এবং সরকারি বা বিতর্কিত জমিকে ওয়াক্ফ হিসাবে ঘোষণা করা যাবে না।
সংশোধিত আইন সংসদে পাস হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। পশ্চিমবঙ্গে এ নিয়ে সহিংসতায় তিনজনের মৃত্যুর খবর রয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, তারা এই আইন রাজ্যে কার্যকর করবে না। বিজেপি এ সিদ্ধান্তকে ‘তোষণের রাজনীতি’ বলছে।
বিরোধী দল কংগ্রেস, ডিএমকে, সিপিআই, আপ ও জেডিইউও এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
সরকারকে এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এরপর আবেদনকারীরা পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ৭৩টি আবেদন থেকে পাঁচটি প্রধান পিটিশন বেছে নিয়ে শুনানি চলবে। বাকিগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে ধরে নেওয়া হবে।
এনএ/