মুফতি ইলিয়াস হুসাইন >>
মিশর, তিউনিসিয়ার গণঅভ্যুত্থান এবং এর পরবর্তী সময় থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। তিউনিসিয়ার সাথে বাংলাদেশের আন্দোলনের প্রায় হুবহু মিল আছে। আন্দোলন শুরু হয়েছিল বেন আলীর সময়ের বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দুর্নীতি, সব জায়গায় দলীয়করণের কারণে। এসবে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। আর এই আন্দোলন চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ২৬ বছরের এক যুবকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। আন্দোলন তীব্রতা পেলে বেন আলী ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যায়। প্রায় একই ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটেছে। আবু সাইদের মৃত্যুর পর আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে অগ্রসর হয়।
তিউনিসিয়ায় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেক্যুলাররা ক্ষমতায় আসে। ইসলামপন্থীদের সাথে বিরোধ শুরু হয়। এই সুযোগে একটা গ্রুপ এসে মনে করে, এখন দুই চারটা বোমা হামলা করে দেওয়া যায়। জাতীয় জাদুঘর এবং সমুদ্র সৈকতে দুইটা ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। দেশজুড়ে ইমার্জেন্সি ঘোষণা হয়।
২০১৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট মারা যায়। কাইস সাইদ বিশাল ভোটে জয়ী হয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়। করোনার সময়ে আবারও জনগণের বিক্ষোভ দেখা যায়। এর সুযোগ নেয় কাইস সাঈদ, পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল শাসন জারি করে। মাত্র এক দশক পর এক স্বৈরাচার থেকে তিউনিসিয়া এখন আরেক স্বৈরাচারের হাতে।
মোটা দাগে মিশরের অবস্থা প্রায় একই। গণঅভ্যুত্থান হলো, হোসনি মুবারক পালালো। প্রেসিডেন্ট হয়ে ক্ষমতায় বসলো মুহাম্মদ মুরসি। ইসলামপন্থী আর সেক্যুলারদের বিরোধ শুরু হলো। সেটা এক সময় ব্যাপক সংঘর্ষে রূপ নিলো। এই সুযোগটা কাজে লাগালো আবদেল ফাত্তাহ সিসি। এরপর একটা গণহত্যা চালিয়ে ক্ষমতা নিলো, মাত্র কয়েক বছরে মিশর এক স্বৈরাচার থেকে আরেক স্বৈরাচারে ফিরে গেলো।
এই দুই অভ্যুত্থানেই একটা জিনিস কমন। ইসলামপন্থী আর সেক্যুলারদের বিরোধ, সেটা কোনোভাবে সংঘর্ষে রূপ দিয়ে তৃতীয় একটি পক্ষের ফায়দা তোলা। আমাদের দেশ একই পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। দিন দিন ইসলামপন্থীদের সাথে বিরোধ ও ইসলামপন্থীদের প্রতি অবজ্ঞা বেড়েই চলেছে। যেটা অচিরেই অনিবার্য সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে। ফলাফল যা তাই। আল্লাহ তাআলা এই জাতিকে হেফাজত করুন।
লেখক: মুফতি ও সিনিয়র শিক্ষক,
জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম
(আকবর কমপ্লেক্স) মিরপুর-১, ঢাকা।
এআইএল/