নাজমুল হুদা মজনু >>
ঢাকার ব্যস্ততম এলাকাগুলোর একটি মতিঝিল। কর্মব্যস্ত মানুষের ভিড়, যানবাহনের শব্দ আর অফিস ফেরত ক্লান্ত মুখের ভিড়ে এক কোণে নীরবে বসে থাকেন একজন মানুষ—সাদেক মিয়া। ৮৫ বছর বয়সের এই বৃদ্ধ ব্যক্তিটি সেখানে বিক্রি করেন ভাজা বাদাম ও বুট। রাত ৯টা, কখনো বা সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে তার বেচাকেনা। মেট্রোরেল যখন বন্ধ হয়, তিনিও উঠে পড়েন।
এই মানুষটি অন্য সবার মতো সাধারণ হলেও, তার জীবনদর্শন ও আত্মসম্মানবোধ তাকে করে তুলেছে অসাধারণ। কারো কাছে হাত না পেতে, নিজের পরিশ্রমে চলার মধ্যে যে তৃপ্তি, যে প্রশান্তি—তা চোখে পড়ে সাদেক মিয়ার জীবনচর্যায়।
‘রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা’—এই বিশ্বাসেই তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অটুট। জীবনের অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকায় এসেছেন জীবিকার টানে। বড় কিছু করার স্বপ্ন নয়, বরং ছোট্ট একটি সম্মানজনক জীবিকা গড়ে তোলার সংকল্পে আজও দৃঢ় তিনি।
তার মুখে নেই কোনো অভিযোগ। নেই সমাজ, রাষ্ট্র বা কারো প্রতি তিক্ততা। জীবনের এই শেষ অধ্যায়ে এসেও এক ধরনের শান্তি ও তৃপ্তির ছাপ ফুটে থাকে তার মুখে। প্রার্থনায়, আত্মবিশ্বাসে এবং সৎ পরিশ্রমে গড়ে ওঠা এক জীবনের প্রতিচ্ছবি তিনি।
এমন একজন মানুষ—যিনি নিজের সবটুকু চেষ্টা দিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন—তার জন্য সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব কি কিছুই নেই? একটু সহায়তা, একটু সম্মান বা একটু আরাম আনার চেষ্টা কি আমরা করতে পারি না? সমাজের অবহেলিত এই নায়কদের নিয়ে ভাবা কি সময়ের দাবি নয়?
সাদেক মিয়া আমাদের চোখে একজন “সুখী মানুষ”। তার সুখ বাহ্যিক নয়, বরং আত্মিক। তবু এই আত্মপ্রত্যয়ী বৃদ্ধ মানুষটির জন্য সমাজের পক্ষ থেকে আরও কিছু করা যেতেই পারে। হয়তো সেটাই হবে তার জীবনের শেষ অধ্যায়ে আমাদের পক্ষ থেকে একটি সত্যিকারের শ্রদ্ধা।
এনএ/