হাসান আল মাহমুদ >>
মিয়ানমারের রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একযোগে প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের প্রভাবশালী ইসলামি দলগুলো। তারা এসব সিদ্ধান্তকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি উল্লেখ করে সরকারকে তা থেকে অবিলম্বে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘মানবিক করিডোরের ইতিহাস ভালো না। যেখানেই মানবিক করিডোর দেয়া হয়েছে, সেখানেই ঝামেলা হয়েছে। আর মানবিক করিডোরসহ এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে নতুন করে চুক্তি করা বর্তমান সরকারের কাজ নয়। এ জন্য এ সরকারকে দ্রুত এসব চুক্তি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত নগর দক্ষিণ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আয়োজিত যৌথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, ‘দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি দেশপ্রেমিক জনতা মেনে নিবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উলামায়ে দেওবন্দ ও তৎকালীন জমিয়ত নেতাদের ত্যাগের বিনিময়ে ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এই স্বাধীনতা আন্দোলনে হাজার হাজার আলেম শহীদ হয়েছেন। তারা যদি সে দিন জীবন বাজি রেখে ভূমিকা না রাখতেন তাহলে আজো পর্যন্ত হয়তো আমরা গোলামীর জিঞ্জিরেই আবদ্ধ থাকতাম। আমরা এই গৌররবময় ইতিহাসের আলোকেই পথ চলতে বদ্ধপরিকর। ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়ে নতুন কোনো ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা রাখতে আমরা প্রস্তুত নই।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা পরিস্কার ভাষায় বলতে চাই, দেশবিরোধী কোনো চুক্তি দেশপ্রেমিক জনতা ও আলেম সমাজ কখনোই মেনে নিবে না। অবিলম্বে সরকারকে মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।’
সোমবার (১৯ মে) জয়পুরহাট জেলার পৌর কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনে ‘উলামায়ে দেওবন্দের অবদান’শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক গণসমাবেশে সংগঠনের আমীর শায়খুল হাদীস আল্লামা মামুনুল হক বলেন, ‘মানবিক করিডোরের নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলা যাবে না। আমরা দিল্লির দাসত্ব ও গোলামি থেকে মুক্ত হয়েছি ওয়াশিংটনের গোলামির জন্য নয়। বাংলার এক ইঞ্চি মাটিও কোনো ভিনদেশিকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘একাত্তর সালে মুক্তিযোদ্ধারা বলেছিলেন, আমরা পিন্ডির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি, দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়। ২৪ এর জুলাইয়ের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর আমি বলতে চাই, আমরা দিল্লির দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছি নিউ ইউর্কের গোলামি করার জন্য নয়। যদি বাংলাদেশকে ওয়াশিংটনের দাসে পরিণত করার কোনো চক্রান্ত করা হয়, হিউম্যানিটেরিয়ান করিডোরের নামে বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হরণ করার জন্য অপতৎপরতা চালানো হয়, তাহলে সারাদেশের মানুষের প্রতি আমার আহ্বান, যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও। দেশের জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও।’
এসময় তিনি ড. ইউনুসের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জনগণের মতামত উপেক্ষা করে কিছু করলে মনে রাখবেন, আপনার পরিণতিও শেখ হাসিনার চেয়ে ভিন্ন কিছু হবে না।’
শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের জাতীয় বীর আবদুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত এ গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদির ও মহাসচিব মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ছাড়া জাতিসংঘের অনুরোধে মিয়ানমারের আরাকানের জন্য মানবিক করিডোর তৈরি ও চট্টগ্রামের প্রধান সমুদ্র বন্দর বিদেশি কোম্পানির তত্ত্বাবধানে দেওয়ার তৎপরতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।’
তারা বলেন, ‘এককভাবে নেওয়া এই সিদ্ধান্তসমূহ অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে রাজনৈতিক দল ও জনগণের সঙ্গে মুখোমুখি করবে। জাতির এই কঠিন সময়ে এই সিদ্ধান্ত বিভেদ বৈ দেশের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।’
রোববার (১৮ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তা, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও ভৌগোলিক অখন্ডতা রক্ষা করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। মানবিক করিডোর ও সমুদ্র বন্দর লিজের সিদ্ধান্ত দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। তাই এককভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে অর্ন্তবর্তী সরকারকে বিরত থাকতে হবে।’
এদিকে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, “মায়ানমারের রাখাইনে সহায়তার নামে ‘মানবিক করিডর’ ও চট্টগ্রাম বন্দরে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি।”
তিনি বলেন, ‘রাখাইনে করিডোর ও নিজস্ব সক্ষমতা ও লাভজনক থাকার পরও বিদেশি কম্পানিকে বন্দর লিজ দেওয়া দেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্বের পরিপন্থি। যা দেশপ্রেমিক জনতা কোনভাবে প্রত্যাশা করে না।’
তিনি সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করতে শ্বেতপত্র প্রকাশের আহ্বান জানান এবং ‘দেশ-মানুষের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে’ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
হাআমা/