রাজনৈতিক সংকটে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে যা জানালো ইসলামি দলগুলো

by hsnalmahmud@gmail.com

হাসান আল মাহমুদ >>

বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে দেশের ৮টি শীর্ষ ইসলামপন্থী ও জাতীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রবিবার (২৫ মে) বিকাল ৫:৪৫ মিনিটে তার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’য় এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। এতে অংশ নেয়া দলগুলো হলো: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, নেজামে ইসলামী পার্টি।

বিজ্ঞাপন
banner

এতে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা শায়খ সাজিদুর রহমান,যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমাদ আবদুল কাদের, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হুসাইন রাযী, গন অধিকার পরিষদের সভাপতি সাবেক ডাকসু ভিপি নূরুল হক নূর।

সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, গৃহায়ণ গণপূর্ত ও শিল্প উপদেষ্টা এডভোকেট আদিলুর রহমান খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব ফারুক ই আজম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

হেফাজতের বক্তব্য: মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ধৈর্য ধরতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্র আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।’

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘অভ্যুত্থানের ৯ মাস পরেও হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধে থাকা মিথ্যা মামলা কেন এখনো প্রত্যাহার হয়নি?’

তিনি দাবি করেন, ‘আগামী জুনের মধ্যেই এসব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’

তিনি নারী সংস্কার কমিশন সম্পর্কে বলেন, ‘সুপারিশগুলো কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। ইসলাম নারীর প্রকৃত সম্মান দিয়েছে—এ ধরণের কমিশন অগ্রহণযোগ্য।’

পীর সাহেব চরমোনাইয়ের বক্তব্য: সরকারকে সংস্কার ও বিচারে অটল থাকার আহ্বান

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বৈঠকে বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার কেবল নির্বাচনী তত্ত্বাবধায়ক নয়, বরং রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ উৎখাতের পর জনগণের মুক্তির সরকার। এই সরকারের দায়িত্ব শুধুমাত্র নির্বাচন আয়োজন নয়, বরং প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিত করাও তাদের অন্যতম কর্তব্য।”

তিনি সরকারের প্রতি ৪টি সুপারিশ তুলে ধরেন:

১. প্রয়োজনীয় ও মৌলিক সংস্কার শেষে নির্বাচন আয়োজন।
২. ফ্যাসিবাদী অপরাধীদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি।
৩. জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন।
৪. সংবেদনশীল বিষয়ে সিদ্ধান্তে সতর্কতা ও পরামর্শ গ্রহণ।

পীর সাহেব চরমোনাই আরও বলেন, “রণে ভঙ্গ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইনশাআল্লাহ, আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবো।”

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের বক্তব্য: নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই

বৈঠক শেষে আমীরে মজলিস মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নিশ্চিত করেছেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে, তার এক ঘণ্টাও বেশি ক্ষমতায় থাকবেন না।’

তিনি তিনটি মূল প্রস্তাবনা দেন:

১. সংস্কার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি ও স্পষ্টতা জনগণের সামনে উপস্থাপন।
২. শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার।
3. জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ।

মামুনুল হক জানান, হেফাজতের মামলাগুলো, নারী সংস্কার কমিশনের আশঙ্কা ও করিডোর-বন্দর ইস্যুতেও আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন—কোনোভাবেই কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন পাস হবে না এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে না।

জমিয়তের প্রতিক্রিয়া: স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পদত্যাগ নয়, ধৈর্য প্রয়োজন

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী সাংবাদিকদের বলেন, “দেশে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে, এখন কোনোভাবেই পদত্যাগ করা যাবে না। বরং প্রয়োজন ধৈর্য, সাহসিকতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে সংস্কার ও নির্বাচনের পথ সুগম করা।”

খেলাফত মজলিসের লিখিত বিবৃতি: জাতীয় ঐক্য ও সংলাপের আহ্বান

ড. আহমদ আবদুল কাদের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ২০০০-এর বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন, বহুজন আহত। এই রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে ফ্যাসিবাদ পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে অচলাবস্থা থেকে বের করে আনছে। কিন্তু সম্প্রতি সরকারের অভ্যন্তর ও বাহিরে মতানৈক্য, বিভেদ এবং পদত্যাগের গুজবে জনগণ উদ্বিগ্ন।’

খেলাফত মজলিসের প্রস্তাবনা:

১. প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ নয়, বরং সকলের সহযোগিতায় অগ্রসর হওয়া।
২. সর্বদলীয় জাতীয় কনভেনশন আহ্বান।
৩. সংস্কারের স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা।
৪. জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা।
৫. দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন।
৬. সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে সব বিভাগকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান।
৭. সংবেদনশীল বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত।
৮. পুরাতন-নতুন সব দলের আন্তরিক সহযোগিতায় সরকারকে শক্তিশালী করা।

হাআমা/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222