মো: নিজাম উদ্দিন স্বাধীন >>
খুলনার যুব মহিলা লীগের নেত্রী নাসরিন ইসলাম তন্দ্রা ওরফে নাসরিন পারভেজ তন্দ্রাকে খুলনা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য এর আগে গতকাল সোমবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানা-পুলিশ তাকে আটক করে।
পরে তাকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কাছে হস্তান্তর করা হয়। তন্দ্রা সবশেষ খুলনা মহানগর যুব মহিলা লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক এর দায়িত্বে ছিলেন।
এর আগে তিনি একই সংগঠনের সোনাডাঙ্গা থানা শাখার প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তবে পুলিশ আজ আদালতে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, তাতে তন্দ্রাকে সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদিকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার তন্দ্রা মালয়েশিয়া থেকে ঢাকা বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। ২৮ মে চট্টগ্রাম থেকে তন্দ্রার ইতালির ভিসা সংগ্রহ করার কথা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেএমপির গোয়েন্দা পুলিশ বিষয়টি ঢাকার বিমানবন্দর থানাকে অবহিত করলে পুলিশ তাকে আটক করে।
কেএমপির গোয়েন্দা শাখার অফিসাস ইনচার্জ তৈয়মুর ইসলাম বলেন, তন্দ্রা খুলনা থানার একটি চাঁদাবাজি, বোমা ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি মামলার আসামি।
মঙ্গলবার দুপুরে তাকে ঢাকা থেকে খুলনার অতিরিক্ত মূখ্য মহানগর হাকিম এম আনিসুজ্জামানের আদালতে হাজির করে জেল হাজতে পাঠানোর আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১৬ জানুয়ারি বিকালে আসামিরা নগরীর রয়েল মোড়স্থ ফ্যাশন জোন বাই লিন্ডা প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ সময়ে ওই প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও সামনে ককটেল ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়। এ ঘটনায় চলতি বছরের ১৮ মার্চ ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খুলনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় এনজিও কর্মী ছিলেন নাসরিন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সাবেক কয়েকজন এমপি ও মেয়রের ছত্রছায়ায় সে তার নাম পরিবর্তন করে তন্দ্রা রেখে খুলনাসহ দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীদের নিজেসহ বিভিন্ন নারী দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং করে কোটি কোটি টাকা অবৈধ ভাবে উপার্জন করেছে।
সূত্র মতে, বিগত ১৫ বছরে তন্দ্রা খুলনার আওয়ামী লীগের নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে প্রায় ৫০ জন প্রভাবশালীকে নিজের বশে এনেছিলেন। তাদের মনোরঞ্জনের জন্য খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার মেয়েদের দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন রঙমহল। অর্থের লোভ দেখিয়ে বা জোর করে তাদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করাতেন তিনি। খুলনার রাজনীতিবিদ ও বিত্তশালীরা তন্দ্রার রঙমহলে নিয়মিত যাতায়াত করতেন।
হাইপ্রোফাইলদের জন্য তন্দ্রা দেশের নামিদামি পর্যটন কেন্দ্রের রিসোর্ট ভাড়া করে মনোরঞ্জনের আয়োজন করতেন। সেখানে শোবিজসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় মডেলদের সরবরাহ করতেন, এমন অভিযোগ রয়েছে।
এর বিনিময়ে নেতাদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, সম্পত্তি, ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব নিতেন তিনি। পদ, পদবি পাওয়ার লোভ দেখিয়ে বেশ কয়েকজন নারীকে দিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডও করাতেন তন্দ্রা। নিজেও বিশেষ কয়েকজনের মনোরঞ্জন করতেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে আরো জানা যায়, নাসরিনের মূল উত্থান হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। আলোচিত এই নারী খুলনা, গোপালগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে অনেক জমি কিনেছেন। অবৈধ কালো টাকায় খুলনার সোনাডাঙ্গা থানাধীন ছোট বয়রায় নির্মাণ করেছেন চোখ ধাঁধানো আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছে।
এছাড়া রায়ের মহলে কোটি টাকা দামের বেশ কয়েকটি প্লট রয়েছে। রয়েছে তিনটি দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি। তবে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর বিক্ষুব্ধ জনগণ খুলনার আলোচিত ক্ষমতাসীন নেতা ও ব্যবসায়ীদের মনোরঞ্জনকারীদের সরদার নাসরিনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার একটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
খুলনা মহানগরের সর্বস্তরের জনগণ আলোচিত ব্ল্যাকমেইলার নাসরিন ইসলাম তন্দ্রার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন। একই সাথে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের খুলনা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, একজন হতদরিদ্র অশিক্ষিত মহিলা কীভাবে কয়েক বছরের মধ্যেই শত কোটি টাকা উপার্জন করে। তারা এ বিষয়ে দুদক খুলনা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে তদন্তের দাবি করেছেন।
এআইএল/