টাকায় মসজিদ নয়, মন্দির: সম্প্রীতির বার্তা নাকি সংখ্যাগরিষ্ঠের আত্মপরিচয়ে আঘাত?

by hsnalmahmud@gmail.com

হাসান আল মাহমুদ >>

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন ২০ টাকার নোট ঘিরে যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল, শেষ পর্যন্ত তা গুঞ্জনই রইলো না—পরিণত হলো বাস্তবতায়। ষাটগম্বুজ মসজিদের জায়গায় জায়গা করে নিলো দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হওয়া সমালোচনা এখন ছড়িয়ে পড়েছে জাতীয় আলোচনায়।

বিজ্ঞাপন
banner

নোটে এই পরিবর্তন নিছক নকশাগত বৈচিত্র্য, নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বার্তা—এই প্রশ্ন এখন কেবল সাম্প্রদায়িক নয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও দোলা দিচ্ছে।

যেভাবে শুরু হলো বিতর্ক

সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে নতুন ২০ টাকার নোটের ছবি, যেখানে দেখা যায়—ষাটগম্বুজ মসজিদ নেই, আছে কান্তজিউ মন্দির। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক মুখপাত্র তখন একে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার যখন বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোটের নকশা প্রকাশ করল, তখন সেই ‘গুজব’ই পরিণত হলো সরকারের প্রণীত পরিকল্পনায়।

২০ টাকার নতুন নোটে এক পাশে মন্দির, অন্য পাশে মহাস্থানগড়। আগে যেখানে ছিল মুসলমানদের গর্বের ঐতিহ্য, সেই মসজিদ। আর এখানেই উঠেছে প্রশ্ন: এটা কি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ, নাকি সংখ্যাগরিষ্ঠের আত্মপরিচয়ে আঘাত?

যেভাবে প্রতিক্রিয়া আসছে

সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে ইসলামপ্রিয় মহল পর্যন্ত সবাই এক বাক্যে বিষয়টিকে সহজভাবে নিচ্ছেন না।

সাংবাদিক জহির উদ্দিন বাবর লিখেছেন, “মসজিদ বাদ দিয়ে মন্দির, এটাকেই কি সংস্কার বলা হয়?”

ইনসাফ সম্পাদক সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার প্রশ্ন তুলেছেন, “নোটের ৯০% ব্যবহারকারী মুসলমান, অথচ একটিতেও নেই মসজিদ?”

মেহেদী হাসান স্মরণ করিয়ে দেন পাশের দেশের বাবরি মসজিদ প্রসঙ্গ, যেখানে মসজিদ ভেঙে গড়া হয়েছে মন্দির।

ধর্মীয় অনুভূতির প্রশ্নে মুহাম্মাদুল্লাহ আরমান বলেন, “নোটে মন্দির থাকতেই পারে, আপত্তি নেই। কিন্তু যেখানে মসজিদ ছিল, সেখানে তা সরিয়ে মন্দির বসানোটা কৌশলগত বার্তা দেয়।”

আর ক্বারী মাহবুবুর রহমান তো সরাসরিই বলেন, “এই জাতির ভাগ্যে ভালো নেতা জোটেনি। টাকায় মসজিদ সরিয়ে মন্দির বসানো যেন সরকারের সংস্কারের অংশ।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষ্য ভিন্ন। তারা বলছে, ‘বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য’ তুলে ধরাই এই নোটগুলোর মূল উদ্দেশ্য। সব ধর্মের স্থাপত্য আমাদের ইতিহাসের অংশ—এই দৃষ্টিভঙ্গিতে রাখা হয়েছে মন্দির।

তবুও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়…

যদি এটি সত্যিই ‘ঐতিহাসিক ঐতিহ্য’ তুলে ধরার প্রয়াস হয়, তবে কেন মসজিদের ছবি বাদ দেওয়া হলো? কেন ২০ টাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি নোটেই দুই পাশে রাখা হলো হিন্দু ও বৌদ্ধ স্থাপত্য?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া না গেলেও, বিতর্ক থামছে না। বরং সামাজিক মাধ্যমে তা ঘনীভূত হচ্ছে, বিশেষত এমন সময়ে যখন রাজনীতিতে ‘ইন্টারিম সরকার’ ইস্যুতে স্নায়ুযুদ্ধ চলমান।

হাআমা/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222