সৌদি আরবের প্রশাসনে দুর্নীতি রোধে নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। দেশটির দুর্নীতি প্রতিরোধ সংস্থা ‘নাজহা’ সম্প্রতি দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে এক বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে, যার ফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের একাধিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারি প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই এই পদক্ষেপের প্রধান উদ্দেশ্য।
চলতি মে মাসের শুরু থেকে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) পর্যন্ত সৌদির বিভিন্ন সরকারি বিভাগে দুর্নীতির অভিযোগে ৪৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি প্রতিরোধ সংস্থা নাজহা। এদের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত ও প্রমাণের ভিত্তিতে ১২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্তরা সরকারি তহবিলের অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া এসব কর্মকর্তা সৌদি সরকারের প্রায় সব প্রধান দপ্তর থেকে এসেছেন— যেমন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা বিভাগ, নগর প্রশাসন, আবাসন, মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য, পরিবহন, কর ও কাস্টমস বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। নাজহা জানিয়েছে, অভিযুক্তদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ঘুষ গ্রহণ, প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং সরকারি সম্পদের অপচয় করার মতো অপরাধে সংশ্লিষ্ট থাকার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে।
নাজহা-র বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সৌদি সরকার প্রশাসনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। সরকারি অর্থ সুরক্ষা ও আর্থিক স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতেই এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এই ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও ধরনের আপস করা হবে না।
গত কয়েক বছরে সৌদি আরবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে নাজহা। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এক বছরে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ১ হাজার ৭০৮ জন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির প্রশাসন। শুধু রাজকীয় পরিবারের সদস্য বা উচ্চপদস্থ নয়, মাঝারি স্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও সমানভাবে তদন্ত চালানো হচ্ছে।
এই অভিযানকে সৌদি সরকারের প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্বচ্ছতা ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখার জন্য দেশটির ভিশন ২০৩০ অনুযায়ী এ ধরনের কড়া পদক্ষেপকে অনেকেই স্বাগত জানাচ্ছেন। প্রশাসনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সৌদির কঠোর অবস্থান বিশ্বব্যাপী নজর কেড়েছে। দেশটির ভবিষ্যৎ আর্থিক ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতার জন্য এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: গালফ নিউজ।
এআইএল/