আল্লামা মামুনুল হক >>
সাধারণত মসজিদে হারামের ছাদে নামাজ পড়ি। আগে সুযোগ পেলে মাতাফে নামাজ পড়তাম। কিন্তু এখন এহরাম ছাড়া পুরুষদের মাতাফে ঢুকতে দেয়া হয় না। মাতাফের সেই অনুভূতি কিছুটা পাওয়া যায় ছাদে। তাই সুযোগ পেলে এখন ছাদে গিয়েই নামাজ পড়ি। খোলা আকাশের নিচে বায়তুল্লাহর মুখোমুখি দাঁড়াতে এক ভিন্নরকম পুলক অনুভব হয় ।
কাল আসরের নামাজের পর জুমার দিনের বিশেষ আমল হিসেবে দরুদ ও দোয়ার জন্য মসজিদুল হারামের ছাদে যাই। একটা মুনাসিব জায়গায় একটু সময় নিয়ে আমল করি। মাগরিবের নামাজ পড়ে আরেকটু সামনে এগিয়ে যাই। সেখানে আওয়াবীনের নামাজ আদায় করি। লম্বা কেরাতের ছয় রাকাত নামাজ শেষ করতে এশার ওয়াক্ত ঘনিয়ে আসে। অল্প কিছু সময় তখনো অবশিষ্ট। সালাম ফেরাতেই পাশ থেকে এক সুদর্শন মাঝ বয়সি আরব সালাম দিয়ে মুসাফাহার জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। পরিচয় জানতে চান। আমার বাড়ি কোথায়? কী করি? প্রতিউত্তরে আমার পরিচয় দিয়ে আমিও তাকে কিছু প্রশ্ন করি।
পরিচয়ের শুরুতেই তিনি বলেন, আনা মিন সুরিয়া। মিন বিলাদিশ শাম। সিরিয়ার কথা শুনে আমিও একটু আগ্রহ নিয়ে তার সাথে গল্পে মাতি।
আবু আহমাদ জাবর আল কাদেরী আল জিলানী তার নাম। আব্দুল কাদের জিলানী রহ. এর সমগোত্রীয়। সিরিয়ার মানুষ পেয়ে সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাইলাম। কথায় কথায় বললেন, এক মিলিয়ন মানুষের শাহাদাতের রক্তের ওপর কসাই বাশার আল আসাদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে সিরিয়া। সেখানে এখন আল্লাহর দ্বীন ও ইসলামী শরিয়ার বিধান কায়েম হয়েছে। তবে খুব ধীরে সুস্থে সহনশীলতার সাথে শরিয়া আইনের প্রয়োগ করা হচ্ছে। মানুষ যেন সহজে সয়ে নিতে পারে।
আলোচনায় দামেশকের মিনারাতুন বাইযার কথা তুলতেই তার চোখ চকচক করে ওঠে । ঈসা আলাইহিস সালামের আসমান থেকে অবতরণস্থল দামেশকের শুভ্র সাদা মিনার- মিনারাতুন বাইযা। সেই পবিত্র দামেশক, সেই মিনারাতুন বাইযা এখন শরীয়া শাসনের অধিনে, ভাবতেই শরীরে শিহরণ জাগে।
ইসলামের বিজয়ের স্বর্ণালী যুগ ঘনিয়ে আসছে। খোরাসান থেকে দামেশক-জিহাদের খুনরাঙ্গা সাগর পেরিয়ে মুক্তির সূর্যোদয়ের দ্বারপ্রান্তে নিপীড়িত উম্মাহ।
সিরিয়া ধীরে ধীরে ইসলামের দুর্জয় ঘাঁটিতে পরিণত হচ্ছে। ইসলামের এই বিজয়ের গল্পগুলো শুনলেই গর্বে বুকটা ফুলে ওঠে। আশায় বুক বাধি খেলাফতের হারানো দিন ফের দেখার ।
নামাজ শেষে ফিরে আসার সময় স্মৃতির ক্যানভাসে আবু আহমাদের একটা চিহ্ন ধরে রাখার চেষ্টা করলাম।
এআইএল/