তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে মুখোমুখি বিএনপি-জামায়াত

by hsnalmahmud@gmail.com

হাসান আল মাহমুদ >>

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আলোচনা তুঙ্গে, তখন জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে চলমান সংলাপে উঠে এলো নতুন বিতর্ক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইস্যুতে দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী—মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে অংশ নিয়ে দলদুটি তাদের পরস্পরবিরোধী প্রস্তাব তুলে ধরেছে।

বিজ্ঞাপন
banner

মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান সংলাপে অংশ নেয় বিএনপি ও জামায়াতের প্রতিনিধিরা। এ সময় দুই দলের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন ও এখতিয়ার নিয়ে ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে সংলাপে অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল কাজ হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা। এর বাইরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনার মতো দীর্ঘমেয়াদি কাজের দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পণ করা সমীচীন নয়।”

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ

তিনি আরও বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্থায়িত্ব সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। চার মাস বা তার বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা গ্রহণযোগ্য নয়।”

এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপি একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, তারা চায় জাতীয় নির্বাচন হোক নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেন পরবর্তী নির্বাচিত সরকার আয়োজন করে।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী এই অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করেছে। দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বৈঠকের মধ্যাহ্নবিরতিতে সাংবাদিকদের বলেন,

“আমাদের প্রস্তাব হলো, জাতীয় ও স্থানীয়— উভয় নির্বাচনই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। এতে জনগণের আস্থা এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে।”

মঙ্গলবার রাজধানীর বেইলী রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠকের মধ্যাহ্ন বিরতিতে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের

তাহের আরও বলেন, “স্থায়ী সমাধানের জন্য সাংবিধানিক সংস্কার জরুরি। আমরা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছি।”

তাঁর মতে, “অর্থবিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বাইরে এমপিরা যেন স্বাধীনভাবে মত দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

তত্ত্বাবধায়ক কাঠামো ও সংসদীয় সংস্কার নিয়ে জামায়াতের এসব প্রস্তাব নিয়ে বিএনপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপ হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ:

বিএনপি ও জামায়াত দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে জোটবদ্ধ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য প্রকাশ পাচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো এবং সাংবিধানিক সংস্কার ইস্যুতে দুই দলের মধ্যে মতানৈক্য ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

বিএনপি যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ও ক্ষমতা সীমিত রাখতে চায়, সেখানে জামায়াত তাদের ক্ষমতা আরও সম্প্রসারিত করে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন উভয়ই পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে।

অন্যদিকে, সংসদীয় রাজনীতিতে গণতন্ত্রায়নের অংশ হিসেবে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার দাবি এখন আর শুধু বামপন্থী বা নাগরিক সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং প্রধান ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এটি সমর্থন পাচ্ছে।

হাআমা/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222