আমরা প্রস্তুত রয়েছি। ইরানের আপাত নির্বিবাদী এই তিন শব্দের বার্তা পশ্চিম এশিয়ায় পরমাণু যুদ্ধের ডঙ্কা বাজাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
বুধবার (১১ জুন) গভীর রাতে (বাংলাদেশ সময় অনুসারে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইরানের সরকারি অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে ইরানের জাতীয় পতাকার ছবি দিয়ে উপরে লেখা হয়, ‘আমরা প্রস্তুত রয়েছি’। কিন্তু কোন বিষয়ে প্রস্তুতির কথা বলা হচ্ছে, তা ব্যাখ্যা করা হয়নি।
ইরান ব্যাখ্যা না দিলেও পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, ওই তিন শব্দের বার্তায় আদতে ইসরাইলকে নিশানা করেছে ইরান।
বুধবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্স আমেরিকার গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ইরানের পরমাণু ঘাঁটিতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। ওই প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পর তেহরান তেলআবিবকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখল বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষর নিয়ে আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে বোঝাপড়া কার্যত ভেস্তে গেছে। এই বিষয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও। তবে সংবাদ সংস্থা এপি ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর-অল-বুসাইদিকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, রবিবার সে দেশে এই বিষয়ে আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ পর্যায়ের আলোচনা হবে।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার আমেরিকার ওপর চাপ বাড়িয়েছে ইরান। সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে বলেছেন, ‘পরমাণু চুক্তি নিয়ে ষষ্ঠ দফার আলোচনা ব্যর্থ হলে এবং সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ইরান আঞ্চলিক (পশ্চিম এশিয়ার) মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাবে।’
তার হুঁশিয়ারি, ‘যদি আমাদের ওপর সংঘাতের পরিস্থিতি চাপিয়ে দেওয়া হয়, মনে রাখবেন, এই অঞ্চলের সমস্ত মার্কিন সেনাঘাঁটি কিন্তু আমাদের নাগালে রয়েছে।’
ইরানের এই হুঁশিয়ারির পরেই পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশের মার্কিন দূতাবাস থেকে কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘তাদের (আমেরিকার কর্মকর্তাদের) সরানো হচ্ছে। কারণ, এটা একটা ভয়ঙ্কর জায়গা হয়ে উঠতে পারে। পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, তা আমরা দেখব। আমরা আপাতত সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’
ট্রাম্প নির্দিষ্ট কোনও দেশের নাম না বললেও একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের প্রতিবেশী দেশ ইরাক থেকে নিজের দেশের কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমেরিকার নাগরিকদেরও ওই এলাকায় না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এমনিতে গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলের নৃশংস হামলার কারণে কয়েক বছর ধরেই অস্থিরতা রয়েছে পশ্চিম এশিয়ায়। ইসরাইলের এই পরিস্থিতিতে বুধবার ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, গোটা অঞ্চলে অস্থিরতা প্রশমনে কোন ঘটনা সহায়ক হতে পারে? উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘তাদের হাতে পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারে না। খুব সহজ বিষয় এটি। আমরা এটা হতে দেব না।’ কোনও দেশের নাম না করলেও ট্রাম্প যে ইরানের উদ্দেশেই তোপ দেগেছেন, তা স্পষ্ট। সব মিলিয়ে পশ্চিম এশিয়ায় নতুন যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এআইএল/