ঈদুল আজহায় ৩৭৯ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৯০, মোটরসাইকেলে ১৪৭

by Nur Alam Khan

ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৩১ মে থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৪ জুন পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত। এসময় ১১৮২ জন আহত হয়েছেন।

গত বছরের ঈদুল আজহায় ৩০৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জন নিহত ও ৭৬২ জন আহত হয়েছিল। ফলে এবার পদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা ২২.৬৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১৬.০৭ শতাংশ, আহত ৫৫.১১ শতাংশ বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন
banner

সোমবার (১৬ জুন) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তিনি জানায়, একই সময়ে রেলপথে ২৫ দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ১২ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ০৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৪১৫ দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত ও ১১৯৪ জন আহত হয়েছেন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৩৪ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত, ১৪৮ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫.৩৫ শতাংশ। এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৬১ জন চালক, ৫০ জন পরিবহণ শ্রমিক, ৫৮ জন পথচারী, ৪০ জন নারী, ৩০ জন শিশু, ৩২ জন শিক্ষার্থী, ০৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৫ জন শিক্ষক, ১ জন চিকিৎসক, ১ জন প্রকৌশলী, ৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।

সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ২৬.৫৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৯.১১ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ১৮.৫৮ শতাংশ বাস, ১৩.৬২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৭.৪৩ শতাংশ কার-মাইক্রো, ৭.৬১ শতাংশ নছিমন-করিমন ও ৭.০৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

দুর্ঘটনার ২৮.২৩ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪০.৬৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ২০.০৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, ০.৭৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনে ও ১০.২৯ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৭.২০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮.২৩ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮.৪৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪.৪৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.৭৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৭৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা ও মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে ৪ দিনের সরকারি ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সবার আগে আমাদের গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কের বৃষ্টির কারণে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে বেপরোয়া যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে সংগঠিত হয়েছে।

ফলে এসব দুর্ঘটনায় সিংহভাগ খাদে পড়ে ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনের লেগে যাওয়ার ঘটনা বেশি ঘটেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি এবারের ঈদেও চরমে ছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের ঈদে বাড়ি যাতায়াত করতে হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মো. ইয়াছিন চৌধুরী, ড্রাইভার ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি বাদল আহমেদ, সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, জিএম মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

এআইএল/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222