হাসান আল মাহমুদ >>
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীদের জন্য ১০০টি সংরক্ষিত আসনের প্রস্তাব ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল প্রস্তাবটির প্রতি ইতিবাচক হলেও কয়েকটি ইসলামি দল এ বিষয়ে স্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে আলী রীয়াজ বলেন, “নারী আসন নিয়ে দু-একটি রাজনৈতিক দল বাদে কারো কোনো দ্বিমত নেই। তবে সংরক্ষণের পদ্ধতি কী হবে, সেটি নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে পূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে।”
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আপত্তি: ‘নারীর জন্য আলাদা আসন বৈষম্যমূলক’
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, “পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নজির নেই যেখানে ১০০টি আসন শুধু নারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এটা বৈষম্যমূলক। ৩০০ আসনে নারী-পুরুষ উভয়েই প্রার্থী হতে পারে, অথচ ১০০টি আসনে কেবল নারীর জন্য বরাদ্দ—এটা ভারসাম্যহীন।”
তিনি আরও বলেন, “নারী জাতি সম্মানের জাতি। তাদের জন্য আলাদা আসন বরাদ্দ দেওয়া তাদের যোগ্যতাকে খাটো করে দেখার নামান্তর। আমাদের দাবি, ৪০০ আসনই নারী-পুরুষের জন্য উন্মুক্ত রাখা হোক। যোগ্যতার ভিত্তিতেই যেন প্রার্থিতা নিশ্চিত হয়।”
খেলাফত মজলিসের অবস্থান: ‘সংরক্ষিত নারী আসন মর্যাদাহানিকর’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ বলেন, ‘সংরক্ষিত নারী আসনের এই প্রস্তাব নারীর মর্যাদার পরিপন্থী এবং সাংবিধানিক বৈষম্যের জন্ম দেয়। নারী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য কাঠামো, কোটা নয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমরা সংরক্ষণের নীতির বিরোধিতা করি। এটি নারীদের অপমানজনক ও অসম্মানজনক।
দ্বীতিয়ত: আমরা সংরক্ষিত নারী আসনের বিদ্যমান সংখ্যা অপরিবর্তিত রেখে, জাতীয় সংসদের মোট আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে সেটিকে ৪০০-এ উন্নীত করার প্রস্তাব সমর্থন করি।’
ইসলামী আন্দোলনের বক্তব্য: ‘নারীরা উন্মুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সম্মান অর্জন করুক’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘১০০ নারী আসনের সংরক্ষণ নিয়ে কমিশন অপ্রাসঙ্গিক চাপ তৈরি করছে। এটি জুলাই অভ্যুত্থান-পূর্ব পরিস্থিতিতে সংস্কারের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ রয়েছে। বাস্তবতা হলো, আমাদের নারীরা ইতিমধ্যে রাজনীতিতে সক্রিয় এবং দেশ পরিচালনায় নেতৃত্বও দিয়েছেন। সংরক্ষণের মাধ্যমে নয়, নারীরা যেন নিজের যোগ্যতায়, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উঠে আসতে পারে, সেটাই উচিত।’
তার ভাষায়, ‘সংরক্ষণের ধারণাই নারীর জন্য অবমাননাকর। নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে তাদের রাজনৈতিক দল পরিচালনায় সম্পৃক্ত করতে হবে, প্রার্থী হতে উৎসাহিত করতে হবে—এটাই মর্যাদার পথ।’
হাআমা/