ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ বিরাজ করছে। তবে এবার ভিন্ন পথে ইরানকে প্রভাবিত করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ নয়, বরং বিপুল বিনিয়োগ ও কূটনৈতিক প্রস্তাবের মাধ্যমে ইরানকে সমঝোতার টেবিলে আনতে চাইছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
চলতি জুন মাসের শুরু থেকেই ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু ইস্যুতে গোপনে আলোচনা চলছে বলে সিএনএন জানায়। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠার আগেই এই আলোচনার সূত্রপাত হয়। ট্রাম্প প্রশাসন চায়, ইরান যেন তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়। আর এ লক্ষ্য পূরণে যুক্তরাষ্ট্র এখন ইরানের বিধ্বস্ত পরমাণু প্রকল্পে ৩ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসামরিক ও শান্তিপূর্ণ খাতে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারে ইরানকে উৎসাহিত করতে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। সিএনএনের সঙ্গে কথা বলা চারজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবিত ৩ হাজার কোটি ডলারের মধ্যে কিছু অর্থ যুক্তরাষ্ট্র নিজে দেবে, আর বাকিটা আসবে মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র ও অংশীদার দেশগুলো থেকে। এ বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা এবং তাদের সঙ্গে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমঝোতায় পৌঁছানো।
ইরানকে আলোচনায় আনতে ট্রাম্প প্রশাসন আরও কিছু উদার প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকে জমা থাকা ইরানের ফ্রিজড অর্থ (যার পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি ডলার) পুনরায় ছাড় করে দেওয়া এবং দেশটির ওপর আরোপিত তেল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা। এসব প্রস্তাবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র চায়, ইরান যেন আক্রমণাত্মক পরমাণু কৌশল থেকে সরে আসে এবং শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের পথ বেছে নেয়।
তবে তেহরানের প্রতিক্রিয়া এখনও অনিশ্চিত। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরান এখনও তাদের প্রস্তাবে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবুও যুক্তরাষ্ট্র তাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, ‘আমরা আভাস-ইঙ্গিতে আমাদের চাওয়া তুলে ধরেছি। সিদ্ধান্ত এখন তেহরানের।’
এর আগে ১২ জুন, ‘ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির দোরগোড়ায়’ আছে—এই অভিযোগ তুলে ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন পরমাণু স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল লক্ষ্য করে। এরপর ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালায় মার্কিন বিমান বাহিনী। এই উত্তপ্ত অবস্থার মাঝেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন যুদ্ধবিরতি।
বর্তমানে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় চলমান প্রচেষ্টা এই সংকটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। যুদ্ধের বিকল্প হিসেবে আলোচনার টেবিল, বিনিয়োগ এবং পারস্পরিক স্বার্থের সমঝোতা যদি সফল হয়—তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও বিশ্ব নিরাপত্তায় তা এক বড় পদক্ষেপ হতে পারে।
সূত্র: সিএনএন, আরটি।
এআইএল/