হাসান আল মাহমুদ >>
সম্প্রতি জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশে এক আত্মঘোষিত সমকামী কূটনীতিককে আবাসিক সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ এবং ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে দেশের ইসলামী দলগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদসহ একাধিক ইসলামি সংগঠন এ উদ্যোগকে বাংলাদেশের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করে নিন্দা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নের গভীর ষড়যন্ত্র: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ক্ষোভ
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক এবং মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিমপ্রধান স্বাধীন রাষ্ট্র। এ দেশের সংবিধান, সমাজ ও আইন ধর্মীয় মূল্যবোধে গঠিত। এমতাবস্থায় জাতিসংঘের এমন একজন আত্মঘোষিত সমকামীকে কূটনীতিক হিসেবে নিয়োগ এই দেশের ধর্মীয় চেতনার ওপর সরাসরি আঘাত।
তারা বলেন, ঢাকায় মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের পরপরই এমন একটি নিয়োগের ঘোষণা প্রমাণ করে যে এখানে পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নের গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। খেলাফত মজলিস জাতিসংঘের এই পদক্ষেপ অবিলম্বে বাতিল এবং সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাগ্রিমো প্রত্যাখ্যানের দাবি জানিয়েছে।
জমিয়তের সতর্কবার্তা: বিদেশি হস্তক্ষেপের পথ খুলে যাবে
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক এবং মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, বিচার ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সংকটে থাকা অবস্থায় ঢাকায় UNHRC-এর কার্যালয় স্থাপন দেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের ওপর বড় হুমকি।
তারা বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পথ হলো স্বচ্ছ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও জনগণের অংশগ্রহণ, বিদেশি হস্তক্ষেপ নয়। অতএব এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তাঁরা।
জাতিসংঘ কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য সঠিক হয়নি: খেলাফত মজলিস
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের মাসিক বৈঠকে নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করে আমীরে মজলিস মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনামলে বাংলাদেশে যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দেশের প্রচলিত আইনে নিশ্চিত করা সম্ভব। এই ক্ষেত্রে প্রয়োজন হচ্ছে প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সদিচ্ছা। কিন্তু উক্ত কাজে ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য সঠিক হয়নি। এখানে মানবাধিকার সুরক্ষার দোহাই দিয়ে সমকামিতা ও অবাধ যৌনাচার, মুসলিম পারিবারিক আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দান সহ বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কোন অপতৎপরতা দেশপ্রেমিক জনতা কখনো মেনে নিব না। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে নতুন করে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি হিসেবে একজন সমকামী ব্যাক্তিকে নিয়োগ দানে অভিযোগ উঠেছে। যা বাংলাদেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য এক হুমকি।
ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের প্রতিবাদ: জাতিসংঘ ‘মুসলিম নিধন সংঘ’
ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নেতৃবৃন্দও এ বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জাতিসংঘকে “মুসলিম নিধন সংঘ” হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, জাতিসংঘ মুসলিম দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে শরিয়াহ, পারিবারিক আইন ও সামাজিক রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে।
মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ূম বলেন, জাতিসংঘের অতীত ইতিহাসে বহু মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ রয়েছে। তারা নিজেদের দায় এড়াতে মুসলিম দেশগুলোতে ঢুকে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালায়। জাতিসংঘের নামে বাংলাদেশে যদি ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামোতে হস্তক্ষেপ হয়, তাহলে ঈমানদার জনতা তা রুখে দেবে।
ঐক্যমতে ইসলামী দলসমূহ: অবিলম্বে সিদ্ধান্ত বাতিল করুন
জাতীয় ঈমানি শক্তিগুলোর অভিযোগ, ঢাকায় জাতিসংঘের এই কার্যালয় মানবাধিকার রক্ষার ছদ্মাবরণে সমকামিতা, অবাধ যৌনাচার, বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় ইত্যাদির গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারে। এটি দেশের নিরাপত্তা, পারিবারিক কাঠামো এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপ ধর্মপ্রাণ জনতার মাঝে গভীর আশঙ্কা ও অসন্তোষের সঞ্চার করেছে। ইসলামী রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো এ ঘটনাকে দেশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় চেতনা ও সামাজিক শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে একঘাত হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। তারা জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের সরকার উভয়কে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য সতর্ক করে দিয়েছে। অন্যথায়, তারা বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
হাআমা/