গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যেই কাতারে অনুষ্ঠিত হামাস ও ইসরাইলের মধ্যকার পরোক্ষ যুদ্ধবিরতি আলোচনা কোনো ফল ছাড়াই শেষ হয়েছে। দুই পক্ষের মৌলিক মতপার্থক্য এবং ইসরাইলের অনমনীয় অবস্থানের কারণে এই আলোচনা ভেঙে পড়েছে বলে ফিলিস্তিনি সূত্রগুলো জানিয়েছে।
গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর এই প্রথম কাতারে দুই পক্ষের মধ্যে একটি পরোক্ষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা। হামাস তাদের প্রস্তাবে কিছু সংশোধনী এনে আলোচনা চালিয়ে যেতে চাইলেও ইসরাইল সেগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক চাপ ও বহু প্রাণহানির মধ্যেও কোনো অগ্রগতি সম্ভব হয়নি।
এদিকে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু গত রোববার (৬ জুলাই) গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় আরও অন্তত ৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা সিটিতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৩৯ জন। এই মুহূর্তে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা ৫৭,৪০০ ছাড়িয়েছে এবং আহত হয়েছেন ১,৩৫,০০০-এরও বেশি মানুষ।
ইসরাইলি আগ্রাসনের তীব্রতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে পর্যন্ত প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে গিয়ে কমপক্ষে ৭৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৪ হাজার ৮৯১ জন। এটি যুদ্ধের চেয়েও বড় মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরেছে।
যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্যে কিছুটা আশাবাদী বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘এ সপ্তাহেই হামাসের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর ভালো সম্ভাবনা আছে। আমরা একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’ তবে বাস্তবে এ ধরনের ইতিবাচক বক্তব্যের বিপরীতে মাটিতে চলছে বোমা আর লাশের খেলা।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের মতে, কাতারে পাঠানো ইসরাইলি দলকে হামাসের সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছানোর প্রয়োজনীয় কর্তৃত্ব দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ আলোচনা ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এর আগে তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনা চালিয়ে যাব ঠিকই, তবে যুদ্ধবিরতি হতে হবে এমন শর্তে, যা ইসরাইলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’ এর মানে স্পষ্ট—যুদ্ধ বন্ধ নয়, বরং সাময়িক সময়ক্ষেপণ।
এদিকে কাতার আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর এখন সবাই তাকিয়ে আছে ট্রাম্পের সাথে নেতানিয়াহুর বৈঠকের দিকে। সবাই আশা করছেন, সেখানে হয়ত একটি সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
তথ্যসূত্র: মেহের নিউজ
এআইএল/