রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বরে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে খুন হন ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগ। এই বর্বরোচিত ঘটনার পর পুলিশ জানিয়েছে, জড়িত সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
ঘটনার সময়কার ভাইরাল হওয়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হামলাকারীরা সোহাগকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর তার নিথর দেহ টেনে-হিঁচড়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণের বাইরে এনে শত শত মানুষের সামনে চালায় ভয়াবহ উন্মত্ততা। কেউ লাশের ওপর লাফায়, কেউ ঘুষি মারে—এমন দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে নিন্দার ঝড় তোলে।
ডিএমপির কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার জানান, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে—মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিন (২২)। তারেকের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তলও উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদের ধরতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোহাগের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় নাম উল্লেখ করে ১৯ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫–২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত সোহাগ মিটফোর্ড এলাকায় ‘সোহানা মেটাল’ নামে একটি ভাঙাড়ি ও পুরনো বৈদ্যুতিক তারের ব্যবসা পরিচালনা করতেন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত বলছে, বিদ্যুৎ কেবল ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ থেকেই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত। মাহমুদুল হাসান মহিন ও সারোয়ার হোসেন টিটু নামে দুজন নিয়মিত চাঁদা দাবি করতেন এবং ব্যবসার ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ চাইছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার সময় হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা চলমান ছিল, আনসার সদস্যরাও কাছেই ছিলেন, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে সোহাগকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নৃশংসতার দৃশ্যগুলো সাধারণ মানুষের বিবেক নাড়া দিয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, এক হামলাকারী মোবাইলে কথা বলার সময় পাশেই লাশের ওপর চলছিল মারধর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নিহত সোহাগ এবং হামলায় নেতৃত্বদানকারী মহিন ও টিটু সবাই ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। যদিও দলীয়ভাবে তাদের আনুষ্ঠানিক কোনো পদে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এজাহারে আসামি করা হয়েছে—মাহমুদুল হাসান মহিন, সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাকিব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, মো. সিরাজুল ইসলাম, রবিন, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।
পুলিশ বলছে, ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত চলছে এবং বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
হাআমা/