টানা ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত শেষে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে আপাত যুদ্ধবিরতি চলছে। কিন্তু এই বিরতি স্থায়ী হবে কি না, তা নিয়ে গাঢ় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ, তেহরান এই যুদ্ধবিরতিকে শান্তি নয়—বরং একটি কৌশলগত বিরতি হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, এই সময়টি ব্যবহার করে নতুনভাবে সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। খবর মিডল ইস্ট আই।
সাম্প্রতিক সংঘাতে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ইরানের প্রায় ৯৩৫ জন নাগরিক। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার। ইসরায়েলের মূল টার্গেট ছিলেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও।
তেহরান বিশ্বাস করে, এ হামলা ছিল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে পরিচালিত একটি ‘থিমেটিক অ্যাসল্ট’। তাই এখন ইরান শুধু পাল্টা সামরিক প্রস্তুতিই নিচ্ছে না, বরং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করার মতো কূটনৈতিক লড়াইয়ের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
বর্তমানে ইরান তাদের সামরিক শক্তিকে নতুন করে সাজাচ্ছে। অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি উন্নয়নে—বিশেষ করে ‘ফাতাহ’ ও ‘খাইবার শেকান’ হাইপারসনিক মিসাইলের উৎপাদন বাড়ানো এবং নতুন প্রজন্মের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে। রাশিয়ার এস-৪০০ এবং সু-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে তেহরান। পাশাপাশি চীনের জে-১০ এবং জে-২০ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান সংগ্রহের পরিকল্পনাও রয়েছে।
আকাশভিত্তিক নজরদারির ঘাটতি যুদ্ধে ইরানের জন্য বড় দুর্বলতা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই স্যাটেলাইট-নির্ভর নজরদারি ও রাডার প্রযুক্তি সংগ্রহ এখন ইরানের অগ্রাধিকার।
এদিকে, পারমাণবিক আলোচনার ক্ষেত্রেও ইরান কঠোর অবস্থানে আছে। আইএইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করা হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে বিপুল পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা হয়েছিল, যা এখনো অক্ষত রয়েছে। এই মজুত ভবিষ্যতে কৌশলগত চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে ইসরায়েল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটে আছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে চাপে রয়েছে। তেহরান এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বড় ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।
অতএব, এই যুদ্ধবিরতি যেন এক নিঃশ্বাস ফেলার সময়মাত্র—এর পর হয়তো আসছে আরও বড় সংঘাত, যার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান।
এনএ/