ভারতের মুম্বাইয়ে ২০০৬ সালে ট্রেনে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনা দেশজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত ১২ জন মুসলিম ব্যক্তি প্রায় ১৮ বছর জেল খাটার পর মুম্বাই হাইকোর্টের রায়ে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। ২০০৬ সালের ১১ জুলাই মুম্বাইয়ের পশ্চিম রেলপথের লোকাল ট্রেনগুলোতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ১৮৯ জন নিহত এবং ৮০০ জনের বেশি আহত হন।
এই ঘটনায় ১২ জন মুসলিম ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়। ২০১৫ সালে একটি বিশেষ আদালত পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন: কামাল আনসারি, মোহাম্মদ ফয়সাল আতাউর রহমান শেখ, এহতেশাম কুতুবউদ্দিন সিদ্দিকি, নাভিদ হুসেন খান এবং আসিফ খান।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন: তানভীর আহমেদ মোহাম্মদ ইব্রাহিম আনসারি, মোহাম্মদ মাজিদ মোহাম্মদ শফি, শেখ মোহাম্মদ আলি আলম শেখ, মোহাম্মদ সাজিদ মারগুব আনসারি, মুজাম্মিল আতাউর রহমান শেখ, সোহেল মাহমুদ শেখ এবং জমীর আহমেদ লতিফুর রহমান শেখ। এছাড়া ওহিদ শেখ নামে একজন ৯ বছর জেল খাটার পর আগেই খালাস পান।
২০১৫ সালের রায়ের বিরুদ্ধে অভিযুক্তরা এবং রাজ্য সরকার উভয়ই মুম্বাই হাইকোর্টে আপিল করে। এই আপিল বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। অবশেষে ২০২৪ সালে মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়। ২০২৫ সালের ২১ জুলাই মুম্বাই হাইকোর্টের দুই বিচারপতি আনিল কিলোর এবং শ্যাম চাঁদক রায় দেন যে, তদন্তকারী সংস্থা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আদালত বলেন, ‘যথাযথ প্রমাণের ঘাটতির কারণে দণ্ডাদেশ বাতিল করা হলো।’ তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি এখনও প্রকাশিত হয়নি।
অভিযুক্তদের পক্ষে আদালতে দাঁড়ান সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী এবং ওড়িশা হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি ড. এস. মুরলিধর। তিনি বলেন, ‘এই মামলা প্রমাণের ভিত্তিতে নয়, জনচাপ এবং মিডিয়ার প্রচারে পরিচালিত হয়েছে।’
তিনি তদন্তকারীদের আচরণ এবং স্বীকারোক্তি নেওয়ার পদ্ধতির সমালোচনা করেন। তিনি আরও বলেন, মিডিয়া ট্রায়ালের কারণে অভিযুক্তদের শুরু থেকেই দোষী হিসেবে গণ্য করা হয়। ড. মুরলিধর উল্লেখ করেন, ‘১৮৯ জনের মৃত্যু মর্মান্তিক, কিন্তু যাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তারাও একপ্রকার ভিকটিম। ১৮ বছর পর খালাস পাওয়া মানে তারা নির্দোষ ছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্তদের পরিবারও কলঙ্ক বহন করে। সমাজ খুব নিষ্ঠুর। ‘জঙ্গি’ তকমা পেলে কেউ আর সম্মানের চোখে দেখে না। ১৭ বছর জেলে থাকার পর জীবনের মূল স্রোতে ফেরা প্রায় অসম্ভব।’
তথ্যসূত্র: মুসলিম মিরর।
এআইএল/