রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় অন্তত ২০ শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন হারালেন শিক্ষিকা মেহেরীন চৌধুরী (৪৬)।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে জানাজা নামাজ শেষে গ্রামের বাড়ি বগুলাগাড়ী চৌধুরী পাড়ায় বাবা মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
নিহত মেহেরীন নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী পাড়ার গ্রামের মরহুম মুহিত চৌধুরীর মেয়ে ও একই এলাকার মনসুর হেলালের স্ত্রী বলে জানা গেছে।
তার স্বামী মনসুর হেলাল জানান, রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা ভার্সনের কো-অর্ডিনেটর (তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি) ছিলেন। সোমবার (২১ জুলাই) দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৭টায়র দিকে তার মৃত্যু হয়।
তিনি জানান, তার স্ত্রী ইচ্ছে করলে বাঁচতে পারত। কিন্তু সে তা না করে তার শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে সেনাবাহিনীর সাথে কাজ করে যান। শ্রেণি কক্ষের ভিতরে থেকে একের পর এক শিক্ষার্থীকে বের আনতে থাকেন। এক পর্যায়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে সে নিজেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মানবিক এই শিক্ষিকার মৃত্যুর সংবাদটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ শোক, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বিভিন্ন পোস্ট দিতে দেখা যায়। কেউ লিখেছেন, ‘তিনি নিজে পুড়ে ছাঁই হয়ে যাচ্ছেন তবুও তিনি জ্বলন্ত আগুন থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এটাই তিনি প্রমাণ করে গেলেন শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতে হয়।
নীলফামারী সদর উপজেলার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা বিএনপি যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী আক্তারুজ্জামান বলেন, তিনি নিজে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন। নিজের জীবনের দিকে না তাকিয়ে স্নেহের ২০ জন শিক্ষার্থীকে আগুনের হাত থেকে প্রাণে বাঁচিয়েছেন। এটি ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। আমাদের গর্ব নীলফামারীর সাহসী মেয়ে আজ নিজেকে বাঁচানোর চিন্তা না করে শিক্ষার্থীকে সন্তানের মতো কঠিন মুহূর্তে আগলে রেখে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
উল্লেখ্য, মেহেরীন চৌধুরী নিজ গ্রামের বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজকে মাইলস্টোনের আদলে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে এক মাস আগে ওই স্কুলের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এনআর/