বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, এখনো আওয়ামী লীগ বা ভারতের জন্য বাংলাদেশে দাঙ্গা হতে পারে। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক মোড়টা ঘুরিয়ে দিয়ে নির্বাচনটা বানচাল হতে পারে। সেজন্য জাতীয় স্বার্থে আমাদের সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের সনাতনী সমাবেশ-২০২৫ শীর্ষক সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দেশের হিন্দু সনাতনী জনগোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা একত্রিত থাকেন। ষড়যন্ত্র দেশে আছে, রাষ্ট্রীয় আছে, গণতন্ত্র নিয়েও আছে। আপনারা যারা সামনে আছেন অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে ফেরত যেতে পারেন, কিন্তু ফেরত যাবেন না। মাথা সোজা করে দাঁড়াবেন। আমি যত দূরেই থাকি, মাঠে আছি। আমি আপনাদের দেখব। জাতীয়তাবাদী শক্তি কখনো মাথা নোয়ায় না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কি দল এটা নিয়ে বেশি পড়াশোনা করার দরকার নেই। কারণ আওয়ামী লীগের তিনি প্রধান ছিলেন, উনার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। হিন্দু শব্দটি তিনি উচ্চারণ করতে পারতেন না, আদর করে তিনি মালাউন বলতেন।
তিনি বলেন, আমি বলব বাংলাদেশে মুসলমান নয় হিন্দুরাই হিন্দুদের শত্রু। হিন্দুরাই হিন্দুদের ক্ষতি করে। এক ভাই যায় তিন ভাইয়ের জায়গা লিখে দিয়ে যায় পড়লো একটা ঝামেলায়। আমি মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করি। হিন্দু মুসলিমের ব্যবধান বুঝি না। আমি খারাপ লোক ভালো লোকের ব্যবধান বুঝি। আমি সৎ লোক এবং প্রতারকের ব্যবধান বুঝি। কোন ধর্মই নিশ্চয়তা দিতে পারবে না যে সেই ধর্মে জন্ম নেওয়ায় সে ভালো লোক। অর্থাৎ ভালো আর মন্দ এই জিনিসটাকে আমি যাচাই করি। আমি সাম্প্রদায়িকতা পছন্দ করি না, আমি সাম্প্রদায়িক জীবনযাপন পছন্দ করি না। হিন্দু মুসলমান সব এক কারণ ছুরি দিয়ে আঘাত করলে দেখা যাবে আমাদের সবার রক্ত লাল। কারো রক্ত আলাদা নয়।
অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা নিজেকে সামাল দিতে পারছেন না। পার্শ্ববর্তী দেশে বসে যখন তখন উল্টাপাল্টা কথা বলছেন।
এদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে দেখলাম, কলকাতায় অফিস খুলে বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন শেখ হাসিনা। মাস্টারমাইন্ড হয়ে শেখ হাসিনা দেশকে অস্থির করতে চান। ভারত শেখ হাসিনাকে জায়গা দিয়েছে, ওখানে বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমরা টিকতে পারছে না। তাদেরকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করছে। তাহলে শেখ হাসিনাকে কেন পুশব্যাক করে না?
তিনি বলেন, পালানোর পরেও উনার (শেখ হাসিনা) ষড়যন্ত্র থামছে না। বেগম জিয়া, তারেক রহমান দেশে থেকে পালায়নি। নির্যাতন নিপিড়নের মধ্যেও এই বাংলা ছেড়ে বিএনপির কোনো নেতা চলে যায়নি।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনী চৌধুরী বলেন, সনাতনীদের উপর চালানো অপকর্মের বিচার এখনো হয়নি। আমরা চাই বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ সম্প্রীতি বজায় থাকুক। সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রতিটি সংখ্যালঘু হত্যাকাণ্ড, হামলা নির্যাতন নিপীড়নের বিচার হওয়া উচিত। সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিচার করতে হবে। এই সরকার বিচার না করলেও আগামী দিনে যে ভোট হবে সেখানে বিএনপি বিজয়ী হবে, সেই সময় যেন এইসব হয় সংখ্যালঘু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়। আমরা সম্প্রীতির দেশ হিসেবে দেখতে চাই শত বছরের ঐতিহ্য বাংলাদেশের দেখতে চাই।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অপর্না দাশ বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর মন্দির কেনো পাহারা দিতে হয়েছিল? কারণ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মন্দিরে গিয়ে লুটিপাট করে, প্রতিমা ভাংচুর করে। বিএনপি মন্দির গড়ে, ভাংচুর করে না।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সামা ওবায়েদ, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাড. গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক প্রমুখ।
এআইএল/